প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি মাধ্যমিক বাংলার সিরাজদ্দৌলা নাটকের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে ।
WBBSE Madhyamik Bengali Notes Sirajuddaula Natok
মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর
নাটক : সিরাজদ্দৌলা
নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও :
১. আমার এই অক্ষমতার জন্য তোমরা আমাকে ক্ষমা করো। " - বক্তা কাদের কাছে কোন অক্ষমতা প্রকাশ করেছেন ?
উত্তর : নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত। এখানে বাংলার নবাব সিরাজ ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা- এর কাছে তার অক্ষমতার কথা প্রকাশ করেছেন।
যখন ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা নবাবের রাজ দরবারে আসেন এবং তিনি ইংরেজদের সঙ্গে থাকা ফরাসিদের দীর্ঘদিনের বিবাদের সূত্রে ধরে যে ঝামেলা, এবং ফরাসিদের সঙ্গে এই ঝামেলা কে কেন্দ্র করে ইংরেজরা সিরাজদ্দৌলার অনুমতি ছাড়াই চন্দননগর আক্রমণ করে চন্দনগর দখল করে নেয়। এবং এরপর ইংরেজরা সেখানকার ফরাসিদের সমস্ত বাণিজ্য কুঠি অধিগ্রহণের দাবি জানায়। যখন ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা - নবাবের কাছে এই ঘটনার সুবিচার চাইতে আসেন তখন নবাব সিরাজের ফরাসিদের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীলতা এবং সহানুভূতি থাকলেও নবাব তাদের কোন রকম সাহায্য করতে পারেন না। নবাবের ফরাসিদের কোনরকম সাহায্য করতে না পারার এই অক্ষমতার কথাই এখানে তিনি প্রকাশ করেছেন ।
২. সিরাজউদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো ।
উত্তর : নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রধান চরিত্র হলেন বাংলার শেষ নবাব সিরাজ। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে সিরাজের চরিত্রর নানান দিক আমরা খুঁজে পাই, যা তাকে নাটকটির হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
নাট্যাংশ অনুসারে সিরাজের চরিত্র যেই প্রধান দিক গুলি তাকে অসাধারণ করে তোলে, তা হল -
দেশাত্মবোধ : নবাব সিরাজ জানতেন তার সভার কিছু সদস্য তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তা সত্বেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেন নি। নবাব চাইলেই তাদের শাস্তি দিতে পারতেন কিন্তু তিনি জানেন যে, তিনি যদি তাদের শাস্তি দিতেন তাহলে দেশের স্বার্থে বা বাংলার স্বার্থে যে যুদ্ধ তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছেন, সেই লড়াইতে নবাব মীরজাফরদের দেশীয় শক্তির সাহায্য কখনোই পাবেন না। এজন্য নবাব তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে নিজের শত্রুদের কাছে মাথানত করেছিলেন।
মুক্ত- মানসিকতা : নবাব সিরাজ একজন মুসলিম শাসক ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কখনোই বাংলা কে শুধু মাত্র মুসলিম দেশ বলেন নি। তিনি সর্বদা হিন্দু মুসলিম একত্রে বাংলা গড়ে তুলেছিলেন এবং নবাব সিরাজের এই হিন্দু মুসলিম ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথার মাধ্যমেই তার মুক্ত জাতীয়তা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
বুদ্ধিমান : নবাবের সাধারণ বুদ্ধির পরিচয় তখনই পাওয়া যায়, যখন নবাব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ পেয়েও তিনি তাদের কোন শাস্তি দেন না। কারণ নবাব জানতেন,, যদি নবাব সেই সময়ে তাদের শাস্তি দিয়ে ফেলেন তাহলে ভবিষ্যতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে করা লড়াইয়ে নবাব কখনোই দেশীয় শক্তির সাহায্য পাবেন না। আর এজন্যই নবাব সিরাজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই বতর্মান পরিস্থিতিতে সেই কাজটি করেন, যেটি করা হয়তো তার উচিত ছিল না। কিন্তু নবাব সেটি করেছিলেন তার ভবিষ্যতকে চিন্তা করেই।
আত্মসমালোচনা : নবাবের সভাসদদের করা ষড়যন্ত্রের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, নবাবের সামনে তার এমন কিছু ভুল উঠে আসে যার মাধ্যমে তিনি বুঝতে পারেন, নবাব সিরাজের নিজেরও কিছু ভুল হয়েছে।। এবং তার এই ভুলের জন্য নবাব সিরাজ নিজের ভুল স্বীকার করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
দুর্বল মানসিকতা : নবাব সিরাজ একথা জানা সত্বেও যে তার সভার সদস্য রা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন তবুও তিনি তাদের শাস্তি দেননি। অন্যদিকে ঘষেটি বেগম যখন নবাব সিরাজকে অভিশাপ দিয়ে তার মৃত্যুর কামনা করেন, তখন সেই পরিস্থিতিতে নবস্ব নিজের মুখ থেকে কোন কঠোর শব্দ বের করতে পারেন না।
তার বদলে নবাব সিরাজ নিজেই তার মানসিক দূর্বলতার কথা স্বীকার করেন- "আমি পারি না! শুধু আমি কঠোর নই বলে।"
উপরে আলোচিত চরিত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমরা বাংলার নবাব সিরাউদ্দৌলার এক অসামান্য চরিত্র দেখতে পাই। সব মিলিয়ে নবাব সিরাজ হলেন বাংলার একজন ট্র্যাজিক নায়ক।
৩. “ জানি না আজ কার রক্ত সে চায় । পলাশি ! রাক্ষসী পলাশি ” —এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে বক্তার যে মানসিক ভাবনার পরিস্ফুটন ঘটেছে তা আলোচনা করো ।
উত্তর: জনপ্রিয় নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌল্লা নাট্যাংশে প্রশ্নোধৃত উক্তিটি নবাব সিরাজের । এক চরম মানসিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় নাট্যাংশের শেষে লুৎফার কাছে তিনি বেদনার্ত উক্তিটি করেছেন।
নাট্যাংশে সিরাজের চরিত্রটি একটি অতীব ট্র্যাজিক চরিত্র । তিনি নিজের মানসচক্ষে আসন্ন বিনাশ প্রত্যক্ষ করেছেন । কিন্তু ভাগ্যহত সিরাজের পক্ষে সেই মর্মান্তিক পরিণতিকে এড়ানো সম্ভব হয়নি । এই হতাশার প্রতিফলন ঘটেছে প্রশ্নে উদ্ধৃত উক্তিটিতে । তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাকে রক্ষা করতে তাঁর বহু রক্তক্ষয় হবে । ষড়যন্ত্রীদের স্বপক্ষে আনতে গিয়ে আবেগ দেখালেও তাঁর জানা ছিল পলাশির প্রান্তরে শুরু হবে বাংলার অস্তিত্ব রক্ষার চরম রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম । তাই তিনি বলেন— “ … এই পনেরো মাসে আমার এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে , মানুষের এমন নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েছি যে , কোন মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না , ভালোও বাসতে পারি না । ”
পলাশির প্রান্তরে যেখানে এককালে পলাশ ফুল রাঙিয়ে তুলত দিগন্ত , সেখানে আসন্ন পলাশির যুদ্ধ রক্তের দ্বারা লাল করে তুলবে । তাই প্রায় পনেরো মাসের নবাবিতে , যুদ্ধে আর ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত নবাব লুৎফাকে পলাশি সম্পর্কে ধারণা দিতে এমন আতঙ্কিত আর্তনাদ করেছেন ।
৪. "সিরাজদ্দৌল্লা" নাট্যাংশ অবলম্বনে ঘসেটি বেগমের চরিত্র বর্ণনা করো ।
উত্তর: নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘ সিরাজদ্দৌলা নাটকটি পলাশির যুদ্ধের ঐতিহাসিক ঘটনাকে সামনে রেখে রচিত হয়েছে । নাট্যকার বিশেষ কিছু চরিত্রের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সত্যকে হুবহু রক্ষা করেছেন । এই চরিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম চরিত্র হলো “ ঘসেটি বেগম । তাঁর চরিত্রের যে দিকগুলি পাঠ্যাংশে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সেগুলি হলো –
ষড়যন্ত্রকারী : ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের মাসি । তিনি চেয়েছিলেন পিতা আলিবর্দির মৃত্যুর পরে তাঁর স্বামী বাংলার মসনদে বসুন । কিন্তু তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হলে সিরাজের সিংহাসনে লাভ একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে ওঠে । নিজের মনোবাসনা পূর্ণ না হওয়ায় ঘসেটি সিরাজের প্রতি ঈর্ষা থেকে ইংরেজদের সাথে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্রে।
অমানবিক আচরণ : ঘসেটিকে সিরাজের মনে হয়েছে দানবী । ঘসেটির সঙ্গে থাকতে লুৎফারও ভয় হয়— “ মনে হয় , ওর নিশ্বাসে বিষ , ওর দৃষ্টিতে আগুন , ওর বুধ অঙ্গ সঞ্চালনে ভূমিকম্প । ” নবাবের সকল চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রধান বিদ্রোহিনী ঘসেটি বেগম ।
প্রতিহিংসাপরায়ণ : ঘসেটি সিরাজের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও অভিসম্পাত করেছেন । কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সিরাজ ঘসেটিকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন । তাতে ঘসেটি আরও প্রতিহিংসাপরায়ণা হয়ে ওঠেন । ঘসেটির মুখেই সেই প্রতিহিংসার কথা প্রকাশ পায়— “ আমার রাজ্য নাই , তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই — আছে শুধু প্রতিহিংসা । ” এই প্রতিহিংসা তাঁর পূর্ণ হবে সেদিন যেদিন সিরাজের প্রাসাদ অপর জন অধিকার করবে এবং সিরাজকে হত্যা করবে ।
স্বার্থপরতা : নারীর কোনো গুণ – বৈশিষ্ট্য ঘসেটির মধ্যে খুঁজে পাওয়া না যাওয়ায় নবাব তিনি মানবী না হয়ে হয়েছেন দানবী । সিরাজ তাঁকে মায়ের সম্মান দিলেও ঘসেটির মধ্যে কিন্তু মায়ের স্নেহ ছিল না , ছিল তীব্র প্রতিহিংসার দহন জ্বালা নাটকে এক কুচক্রী , স্বার্থান্বেষী , প্রতিহিংসাপরায়ণ কুট নারী হিসাবেই ঘসেটির উপস্থিতি ।
৫.সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমকে নিয়েছে প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলাম কেন?
উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্র থেকে দূরে রাখার জন্য ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার বড় খালা ঘসেটি বেগম। সিরাজ নবাব হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘষেটি বেগমের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই তিনি ইংরেজ ও দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে সিরাজের পতনের জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই বিষয়টি সিরাজ তাঁর গুপ্তচর মারফত জানতে পারেন। তাই তিনি ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রেখে তার ওপর নজরদারি জোরদার করেন, যাতে তিনি কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারেন ।
৬. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন নিজেকে শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন?
উত্তর: নবাব আলীবর্দী খাঁর সঙ্গে থেকে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন করেছেন বলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। তিনি অত্যন্ত সাহসী এবং বিভিন্ন রাজ্যবিজয়ী নবাব ছিলেন। তার সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও যুদ্ধে যেতেন এবং বিপক্ষ শক্তির কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতেন। তিনি ছিলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী একজন নবাব। নানার সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে গিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন বলে তিনি নিজেকে বাংলার শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
৭. সিরাজদ্দৌলা নাটকে লুৎফা উন্নিসার চরিত্র আলোচনা করো ।
উত্তর : নাট্যাংশে লুৎফা সিরাজের স্ত্রী। রাজদরবারে সিরাজ যখন সবার সাথে বাকবিতণ্ডায় ক্লান্ত ও বিপর্যস্ত ঘষেটি সাথে বিতর্কে মহত্ব ঠিক সে সময় লুৎফার আগমন। ঘষেটি মুখে সাম্রাজের পতনের কথা শুনে এবং সিরাজের নির্মম পরিনতি চিন্তনে লুৎফা ছুটে এসে ঘষেটি কে অনুরোধ করে এমন কু বাক্য প্রয়োগ না করতে।
এথেকে লুৎফার স্বামী প্রেমে পরিচিত হয়। ঘষেটি কে লুৎফা বলেন তিনি নবাব মহিষী নন ঘসেটির কন্যা সমূহ। লুৎফা ঘষেটি বিদেশ ভাব অনুভব করলেও তাকে প্রাসাদে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। দুর্বল হৃদয়ের সিরাজের মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন। তাই যে যুদ্ধবিগ্রহের আলোচনাকে নবাবকে তীব্র করতে চায়।লুৎফা চরিত্রে মমত্ববোধ অকৃত্রিম ভালোবাসা ও বিচক্ষণতার সম্মিলন ঘটেছে ।
PDF will be available soon
Join Our Telegram Channel for Notifications
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.