প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান |
বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা : মানব জাতির গৌরবের শিখরে উত্তরণে যার ভূমিকা নিঃসংশয়ে ।এক বাক্যে স্বীকার করে নিতে হয় তার নাম বিজ্ঞান। 'বিজ্ঞান’ শব্দটির অর্থ – বিশেষ জ্ঞান। মানুষ অন্য প্রাণীর তুলনায় অনেক উন্নত ও বুদ্ধিমান। তাই সীমাবদ্ধ জ্ঞানের বাইরে বিশেষ জ্ঞানের সাহায্যেই সে বিশ্বের সব প্রাণীদের উপর অধিকার স্থাপন করেছে। মানুষের কাছে কোন কিছুই আজ আর অসম্ভব নয়। কোন একদিনের সেই গুহাচারী মানুষ আজ নির্মাণ করছে গগনস্পর্শী অট্টালিকা। আদিম মানুষ থেকে আধুনিক জীবনে উপনীত হওয়ার একমাত্র অবলম্বন হলাে বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের জন্ম : সৃষ্টির ঊষালগ্নে মানুষ গভীর অরণ্যে, নদীতীরে বসবাস করতো । ভয়ঙ্কর প্রকৃতি বার বার মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকত। গভীর অরণ্যে ঝড় ঝঞ্ঝা -বজ্র বিদ্যুৎ আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষকে বাঁচতে হতাে নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে। মানুষ ছিল তখন প্রকৃতির হাতের ক্রীড়নক। সে দিন মানুষকে রক্ষা করতে আসেননি স্বর্গবাসী কোন দেবতা । কিন্তু মানুষ যেদিন নিজ বুদ্ধি বলে পাথর ঘষে অস্ত্র নির্মাণ করে পশুদের আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষা করল, তারপর ভয়ঙ্কর প্রকৃতিকে বশে এনে আত্মরক্ষার চিন্তা করল, সে দিন জন্ম হল বিজ্ঞানের। সে বিজ্ঞান-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে মানুষ শিখেছে আগুনের ব্যবহার, শিখেছে কৃষিকর্ম, বয়ন কর্ম আর রাস্তা নির্মাণ। ওই বিজ্ঞানের বলেই নিসর্গ প্রকৃতি তথা জলে-স্থলে-আকাশ উড়াল বিজয় পতাকা । কবির ভাষায় −
“পাখিরে দিয়েছ গান,
গায় সেই গান
তার বেশী করে না সে দান,
আমারে দিয়েছ সুর।
আমি তার বেশি করে দান।
আমি গাই গান ।"
এভাবে মানুষ আপন প্রভাব বিস্তার করে বিধাতার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করল ।
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা : আজ শতশত শতাব্দী ধরে চলে আসছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। সভ্যতার বিকাশ ও বিবর্তনে বিজ্ঞানের সীমাহীন অবদানের কথা আজ আর কারো অজানা নয়। বিজ্ঞানকে করায়ত্ত করে মানুষ সাগর লঙঘন। করল, উদ্দাম নদী স্রোতকে বশীভূত করে বাঁধ দিয়ে তার দুই তীর জুড়ে দিল। খাল নির্মাণ করে নদীর জল ধারাকে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়ে মরু প্রান্তরকে উর্বর শস্য শালিনী করে তুলল। সকালে ঘুম থেকে উঠে দিন আরম্ভ করা থেকে রাত্রে শয্যা গ্রহণ, জীবনযাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপ আজ বিজ্ঞানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । বলা যায়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা বিজ্ঞানের মুখাপেক্ষী ।
বৈদ্যুতিকক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান : বৈদ্যুতিক শক্তির সহায়তায় সুইচ টিপে উঠে যাচ্ছে। মানুষ ঘরের বিভিন্ন তলার কক্ষে। তাইতো আজ পাঁচতলা, দশতলা আর বাহান্ন তলা বাড়িতে হাটু ভেঙ্গে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবার আর প্রয়ােজন নেই – রয়েছে লিফট।তাছাড়া বৈদ্যুতিক পাখা, হিটার, ফ্রিজ, ইলেকট্রিক ইস্ত্রি, ওয়াশিং মেশিন, ইলেকট্রিক বেল, ঘড়ি, দাড়ি কামানাের সরঞ্জাম। সর্বোপরি মােবাইল ফোন যা সকাল থেকে রাত্র পর্যন্ত এই গানটা পৃথিবীটাকে নিয়ে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। তাই আজ আর চিঠিপত্র লিখে সময় নষ্ট করতে হয় না – সময় গড়িয়ে আত্মীয় স্বজনের খবর নেওয়ার প্রয়ােজন হয় না। ইলেকট্রিকের মাধ্যমে E. V. M. মেশিনের দ্বারা জনসাধারণ তাদের নেতা নির্বাচন করেছেন অতি সহজে।
টেলিভিশনের অবদান : আধুনিক যুগে বিজ্ঞানের একটি শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার টেলিভিশন। যার কল্যাণে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চক্ষুগোচর হচ্ছে। এত সহজে এত অল্প সময়ে এত বিস্তৃত ভাবে লক্ষ লক্ষ জ্ঞান শিক্ষা ও আনন্দ বিতরণের ব্যবস্থায় দূরদর্শন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দূরদর্শন ছাত্র-শিক্ষক, চাকুরিজীবি, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকলের জন্যই প্রয়ােজনীয়। আমেরিকার বক্তৃতা, ইংল্যান্ডের গান আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার বর্ণনা আমরা ঘরে বসেই টেলিভিশনে দেখতে পাই। এরকম আনন্দ দানের এত বড় মাধ্যম পৃথিবীতে কোন কালে ছিল না ।
বিজ্ঞানের আবিষ্কার – "কম্পিউটার ও ল্যাপটপ" : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার আর ল্যাপটপ এর মাধ্যমে খুব কম সময়ের মধ্যে যােগ-বিয়ােগ, গুণ-ভাগের বড় বড় অংকের নির্ভুল ভাবে হিসেবে সম্পন্ন করা যায়। বর্তমানে ব্যাঙ্ক, অফিস-আদালত, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনে হিসাবের কাজে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে ।
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান : পৃথিবীতে আজ মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে যার দৌলতে সে হচ্ছে চিকিৎসা শাস্ত্রে বিজ্ঞান । পদার্থ বিজ্ঞান এবং রসায়নের অগ্রগতি আরও বিস্ময়ের ব্যাপার। পূবে যে সব রোগ একে বারেই দুরারােগ্য ছিল আজ আর তা এমনটি নয়। বিজ্ঞান মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে অনেক জীবনদায়ী ঔষধ যা বাড়াচ্ছে মানুষের গড় আয়ু। আজকের পৃথিবীতে কলেরা, মহামারী, টাইফয়েড, বসন্ত, কর্কট, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ব্লাড ফ্লু প্রভৃতি মারাত্মক রোগ আর দুরারোগ্য নয়। চিকিৎসকরা রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে শরীরের ভিতরকার ছবি তুলে তা পরীক্ষা করে চিকিৎসা করতে পারছেন। রেডিয়ামের দ্বারা দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব হচ্ছে। কৃত্রিম হৃদয় স্থাপন, কিড়নি স্থাপন প্রতিদিনই বড় বড়চিকিৎসালয়ে চলছে। বস্তুত চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির কথা অল্প কথায় বলে শেষ করা যায় না ।
কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব : কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান আজকের দিনে অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের অবদানে উষর ভূমি আজ হয়েছে শস্য-শ্যামল ভূমি। পূর্বে যেভাবে ছিল দৈব নির্ভর কৃষিকাজ অর্থাৎ আকাশ থেকে বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল, বর্তমানে তা আর নয়। উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, নানা প্রকার যন্ত্রপাতি পাম্প-মেশিন এবং অধিক ফলনের জন্য গাছের অণুখাদ্য আবিষ্কারের ফলে কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের লােকের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে।
উপসংহার : বিজ্ঞান যেভাবে দৈনন্দিন জীবনে অহরহ উন্নতি সাধন করে।চলেছে ঠিক সেভাবে বিজ্ঞানের আবার কিছু কিছু ধ্বংসাত্মক দিকও আছে। তবে মানুষের উপরে বিশ্বাস হারানাে ঠিক নয়। পৃথিবীতে এখনও বিবেকবান মানুষের অভাব নেই ধীর গতিতে হলেও বিশ্ববিবেক জাগ্রত হচ্ছে। আশা করা যায় মানুষ এই বিজ্ঞানকে সার্বিক মানব কল্যাণে ব্যবহার করবে। বিজ্ঞান কোটি কোটি মানুষের আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবে ।
এই রচনা অনুসরণে আরও যেসব রচনা লেখা যায় :
- আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান
- প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
অন্যান্য প্রবন্ধ রচনার আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন |
আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভালো লেগে থাকলে আমাদের সাহায্য করতে পারেন | আমাদের সাহায্য করতে নীচের DONATE বাটনে ক্লিক করুন |
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.