Madhyamik History Last Minute Suggestions 2022 | মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 | তৃতীয় অধ্যায় : প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

 madhyamik-last-minute-suggestions-2022-history-chapter3


প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার (Madhyamik Exam 2022 History Suggestions) জন্য History এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অর্থাৎ Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions.


মাধ্যমিক লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022

ইতিহাস

তৃতীয় অধ্যায়

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ 

একটি বা দুটি শব্দ উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান 2

(1) বিপ্লব বলতে কী বোঝো ?

উত্তরঃ বিপ্লব কথার অর্থ হল কোন প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন । কোন দেশ বা সমাজে জনগণ প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন ঘটলে তাকে বিপ্লব বলে অভিহিত করা হয় ।

 

2)  সৈয়দ আহমেদ এর আদর্শ কি ছিল ?

উত্তরঃ সৈয়দ আহমেদ ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে দার-উল-হারব অর্থাৎ বিধর্মীর দেশ বলে অভিহিত করেন । তিনি তার অনুগামীদের ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসনে উচ্ছেদ ঘটিয়েছে দেশকে দার-উল-ইসলাম বা ইসলামের দেশে পরিণত করার নির্দেশ দেন । 

 

3) দুর্জন সিংহ কে ছিলেন ? 

উত্তরঃ দুর্জন সিংহ ছিলেন বাঁকুড়ার জয়পুরের জমিদার ও চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম নেতা। তিনি প্রায় 1500 জন অনুগামী দিয়ে প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং প্রায় 30 টি গ্রামে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। 

 

4) ঔপনিবেশিক বাংলায় ধর্মের ছত্রছায়ায় সংঘটিত দুটি কৃষক বিদ্রোহের নাম লেখ ।

উত্তরঃ ওয়াহাবি আন্দোলন ও ফরাজি আন্দোলন ।


5) বেলাকা চাষ বা রাহতি চাষ কী ?

উত্তরঃ বেলাকা চাষ বারাতি চাষের ক্ষেত্রে নীলকররা চাষীকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে চাষী নিজের জমিতে নীলচাষে বাধ্য করত । রবি চাষের জমি, লাঙ্গল, সার, বীজ অন্যান্য সব খরচ বহন করতে হতো । ফলে এই পদ্ধতিতে প্রতি 10 হাজার বিঘা জমিতে নীল চাষের জন্য খরচ পড়ত মাত্র কুড়ি হাজার টাকা । ডাইনির করা সর্বদা চাষীকে বে-এলাকা বা রায়তি চাষে বাধ্য করত ।

 

6) ফরাজি আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল ?

উত্তরঃ ফরাজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল হাজী শরীয়ত এর উদ্যোগে। ফরাজি আন্দোলনের কিছু লক্ষ্য হলো - ক) ব্রিটিশ ভারতকে দার-উল-হারব বা বিধর্মীর দেশ থেকে দার-উল-ইসলাম বা ইসলামের পবিত্র ভূমিতে পরিণত করা । খ) জমিদার নীলকরদের শোষণের অবসান ঘটানো ।

 

7) বারাসাত বিদ্রোহ কী ?

উত্তরঃ ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা তিতুমীরের বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন । তিনি নিজেকে বাদশা ঘোষণা করেন মৈনুদ্দিন কে প্রধানমন্ত্রী ও গোলাম মাসুম কে সেনাপতি নিয়োগ করেন । নারকেলবাড়িয়া গ্রামে বাঁশেরকেল্লা তৈরি করে তার দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিভিন্ন স্থানের জমিদারদের কাছে কর দাবি করেন । এই ঘটনা বারাসাত বিদ্রোহের পরিচিত । 

 

8) মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য কী ছিল?

উত্তরঃ মুন্ডা বিদ্রোহের প্রধান লক্ষ্য ছিল- 1) ব্রিটিশ সরকারের ধারা বাতিল করে দেওয়া মুন্ডা সমাজের চিরাচরিত আইন বিচার ও সামাজিক বিধিব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, 2) দিকু নামে বহিরাগত 'জমিদার মহাজন' ও ব্যবসায়ীদের মুন্ডা অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করা । 

 

9) কারা পাগলাপন্থী নামে পরিচিত?

উত্তর: উনিশ শতকের প্রথমার্ধে ফকির করিম শাহ বা চাঁদগাজী ময়মনসিং জেলা রংপুর শেরপুর অঞ্চলের মধ্যে এক নতুন ধর্মমত প্রচার করেন । এই ধর্মের অনুরাগীরা পাগলাপন্থী নামে পরিচিত । 

 

10) উপনিবেশিক শাসনকালে নীলকররা কৃষকদের উপর কিভাবে শোষণ অত্যাচার চালাত ?

উত্তরঃ নীলকররা- 1) কৃষকদের খাদ্য উৎপাদন এর পরিবর্তে জোর করে নীলচাষে বাধ্য করত । 2) নীলচাষের রাজি না হলে নীলকররা কৃষককে তাদের নীলকুঠিতে আটকে রাখত, শারীরিক নির্যাতন চালাত । 3) কৃষকদের গরু-বাছুর ধরে নিয়ে যেত এবং কৃষক পরিবারের মহিলাদের সম্মানহানি করত । 4) নীলকররা কৃষকের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিত ।

 

11) দাদনী প্রথা কী? 

উত্তরঃ নীলকন্ঠ নীল চাষের জন্য চাষী কে বিঘা পিছু মাত্র 2 টাকা অগ্রিম দদন দিত । কোন চাষী একবার দাদন নিলে তা আর কখনই নীলকরের খাতায় পরিষদ হতো না । তারা গড়ে প্রতি আড়াই বিঘা জমিতে এক বিঘা বলে গণ্য করত । ফলে চাষিক নীলচাষে নিজের প্রচুর জমি ব্যবহার করতে হত । এই প্রথা দাদনী প্রথা নামে পরিচিত ।

 

12) তারিখ-ই-মহম্মদীয়া কী?

উত্তরঃ তারিখ-ই-মহম্মদীয়া কথার অর্থ হল মহম্মদ প্রদর্শিত পথ । অষ্টাদশ উনিশ শতকে আরব দেশ তথা ভারতীয় মুসলিম সমাজের যে পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন শুরু হয় তা তারিখ-ই-মহম্মদিয়া নামে পরিচিত । এই ভাবধারার মূলকথা হলো ইসলামকে অতীতের পবিত্রতায় ফিরিয়ে দেওয়া ও অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা । 

 

13) নীল কমিশন কবে, কী উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল ?

উত্তরঃ  1878 খ্রিস্টাব্দে 31 শে মার্চ নীল কমিশন গঠিত হয় । নীল কমিশন গঠন করা হয়েছিল নীল চাষীদের অভিযোগ ও তাদের ওপর অত্যাচারের বিষয়টি সন্ধান করার জন্য । 

 

14) হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কে ছিলেন ?

উত্তরঃ হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক । তিনি তার পত্রিকায় বাংলার চাষীদের উপর নীলকরদের অত্যাচারের বিবরণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করেন করে থাকেন । তিনি দরিদ্র নীলচাষীদের নানাভাবে সহায়তা করেন । 

 

15) বিদ্রোহ ও বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো ।

উত্তরঃ বিদ্রোহ বলতে বোঝায় কোন প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনগোষ্ঠীর আন্দোলন । আর বিপ্লব বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থার দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন । 

 

16) ভিল্ কাদের বলা হত ?

উত্তরঃ কি হলো ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য আদিবাসী উপজাতি সম্প্রদায় । পশ্চিম ভারতের বর্তমান গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের খান্দেশ ও তার সংলগ্ণ সুবিস্তৃত অঞ্চলে রিয়েল জাতির একটি অংশ বসবাস করত । 

 

17) দিকু কাদের বলা হত?

উত্তরঃ ছোটনাগপুরের সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে আগত বহিরাগত জমিদার ও মহাজন ব্যবসায়ীদের বলা হত । 

 

18) কেনারাম ও বেচারাম কী ?

উত্তরঃ ছোটনাগপুরের সাঁওতাল অধ্যুষিত অঞ্চলে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা বেশি ওজনের বাটখারা দিয়ে ওজন করে শয়তানদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কিনত, সেই বাটখারা কেনারাম নামে পরিচিত। আবার এরাই কম ওজনের বাটখারা দিয়ে ওজন করে সাঁওতালদের কাছে লবণ, চিনি প্রভৃতি পণ্য বিক্রি করত । এ বাটখারা বেচারাম নামে পরিচিত ।

 

19) তিতুমির কে ছিলেন এবং তিনি কাদের বিরুদ্ধে কিভাবে সংগ্রাম করেন?

উত্তরঃ তুমি ছিলেন বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা । তিনি দরিদ্র নির্যাতিত মুসলিমদের নিয়ে অত্যাচারী জমিদার, মহাজন' ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন এবং বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন । শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি নিহত হন ।

 

20) রানি শিরোমণি কী জন্য বিখ্যাত?

উত্তরঃ  রানী শিরোমণি ছিলেন মেদিনীপুরের রানী এবং চুয়াড় বিদ্রোহের অন্যতম নেত্রী । বিদ্রোহে অসামান্য অবদানের জন্য রানী শিরোমণি মেদিনীপুরের লক্ষীবাঈ নামে পরিচিত হন । 

 

21) অরণ্য আইন কী?

উত্তর: ভারতের ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকার 1855 খ্রিস্টাব্দে অরণ্য সনদ এবং পরবর্তী আরও কয়েকটি আইনের দ্বারা এ দেশের অন্যান্য সম্পদের ওপর প্রজাদের অধিকার খর্ব করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । এই আইন গুলি অরণ্য আইন নামে পরিচিত । 

 

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী :  প্রতিটি প্রশ্নের মান 4 

1) একটি শাসনকালে ভারতে সংঘটিত বিভিন্ন কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি কি কি ?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে সংঘটিত কৃষক ও আদিবাসী বিদ্রোহের কারণ : 

ভূমিকা: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে কৃষক ও উপজাতি গোষ্ঠীর ওপর সরকার এবং তাদের সহযোগী জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলন ও বিদ্রোহ শুরু হয় । এসব আন্দোলন বা বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি ছিল -

ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কৃষকদের ওপর ভূমির রাজস্বের বোঝা বিপুল পরিমাণে বাড়িয়ে দিলে কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে যায় ।

ব্রিটিশ আইন ও বিচার ব্যবস্থা: ইংরেজরা ভারতের চিরাচরিত আইন কানুন ও ও বিচার ব্যবস্থা বাতিল করে তাদের নিজস্ব আইন ও বিচার ব্যবস্থা চালু করে । ভারতীয় সমাজে এরূপ বিদেশি হস্তক্ষেপে দেশবাসী ক্ষুব্ধ হয় ।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ত্রুটি: সরকার প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে কৃষকরা তাদের জমির মালিকানা হারায় এবং জমির মালিকানা চলে যায় এক শ্রেণীর নতুন জমিদারের হাতে । তারা নিজের ইচ্ছামত কৃষকদের ওপর কর বৃদ্ধি করে ।

অত্যাচার: জমিদার শ্রেণী কর আদায়ের কৃষকদের ওপর সীমাহীন নির্যাতন শুরু করে এবং যখন তখন কৃষককে জমি থেকে উৎখাত করতে থাকে । 

খাদ্যাভাব: সরকার কৃষকদের ধানের পরিবর্তে নীল, পাট, তুলো প্রভৃতি চাষে বাধ্য করলে কৃষকদের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দেয় ।

ঋণের জাল: মহাজন শ্রেণী দরিদ্র প্রজাদের নানাভাবে ঋণের জালে জড়িয়ে দেয় । ফলে প্রজাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে ।

 

2) বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্য লেখ ।

উত্তর: বিভিন্ন যুগে শোষক অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনগোষ্ঠী প্রতিবাদে সামিল হয়েছে । এই ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মাধ্যমে । বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, যেমন -

ক) বিদ্রোহ :

  • সংজ্ঞা: বিদ্রোহ বলতে বোঝায় কোন প্রচলিত ব্যবস্থার পরিবর্তনের দাবিতে বিরোধী জনসমষ্টির আন্দোলন । বিদ্রোহ সফল হলে পূর্বতন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকে, ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহের প্রতিক্রিয়ায় ধীরে ধীরে পরিবর্তন ঘটতে থাকে । 
  • উদাহরণ: ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের রংপুর বিদ্রোহ, পাবনা বিদ্রোহ, নীল বিদ্রোহ প্রভৃতি কৃষক বিদ্রোহ হল বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ । এই বিদ্রোহ অনেক সময় ব্যাপক আকার নেয় তাকে বলা হয় মহাবিদ্রোহ । যেমন- 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ । 
খ) অভ্যুত্থান: 
  • সংজ্ঞা: অভ্যুত্থান বলতে বোঝায় কোন প্রচলিত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিজ গোষ্ঠীর একাংশের সংগ্রাম ।  
  • উদাহরণ: 1857 খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একাংশের উদ্যোগে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহ বা 1946 খ্রিস্টাব্দে ভারতের ব্রিটিশ নৌবাহিনীর সেনাদের নেতৃত্বে নৌ বিদ্রোহ অভ্যুত্থান হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে ।

গ) বিপ্লব:

  • সংজ্ঞা: বিপ্লব বলতে বোঝায় প্রচলিত ব্যবস্থা দ্রুত, ব্যাপক ও আমূল পরিবর্তন । 
  • উদাহরণ: অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব বা 1789 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লব হলুদ বিপ্লব এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । কারণ শিল্প বিপ্লবের ধারা ইউরোপের শিল্প ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে । ফরাসি বিপ্লবের ফ্রান্সের পূর্বতন সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন ঘটে । 

 

3) বারাসাত বিদ্রোহ সম্পর্কে কী জানো ? অথবা, বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের বিবরণ দাও ।


উত্তর: ওয়াহাবি কথার অর্থ হল নবজাগরণ । তিতুমীর মক্কায় গিয়ে সৈয়দ আহমেদের কাছে থাকে বা হবে আদর্শ গ্রহণ করেন । এরপর তিনি বাংলা এসে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন । 


ক) তিতুমীরের নেতৃত্বে: বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মীর নিসার আলী বা তিতুমীর । তিনি জমিদার ও নীলকরদের হাতে নির্যাতিত দরিদ্র মুসলমানদের নিয়ে একটি বিরাট বাহিনী গড়ে তোলেন । এতে জমিদাররা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে । 


খ) ওয়াহাবীদের উপর অত্যাচার: জমিদার ও নীলকরদের সঙ্গে তিতুমীরের সংঘর্ষ শুরু হলে ব্রিটিশ বাহিনী ও তিতুমীরের বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘর্ষে নেমে পড়ে । পুঁরার জমিদার কৃষ্ণদেব রায় ঘোষণা করেন যে কেউ তিতুর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলে বা দাড়ি রাখলে তাকে জরিমানা দিতে হবে । কেউ তিতুমীরকে বাড়িতে আশ্রয় দিলে তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হবে । 


গ) কৃষ্ণদেব রায়ের সঙ্গে সংঘর্ষ: বিভিন্ন কারণে তিতুর বাহিনীর সঙ্গে কৃষ্ণদেব রায় এর সংঘর্ষ বাধে । তিতুমীর 300 জন অনুগামী সহ কৃষ্ণদেব রায়ের বাড়ি আক্রমন করলে সংঘর্ষ হিন্দু মন্দির ধ্বংস এবং বহু পুরোহিত নিহত হন ।


ঘ) বাদশাহ ঘোষণা: তিতুমীর বারাসাত বসিরহাটের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটিয়ে নিজেকে 'বাদশাহ' বলে ঘোষণা করেন । তার শাসনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মৈনুদ্দিন  এবং সেনাপতি অন গোলাম মাসুম । তিনি নারকেলবেরিয়া গ্রামে একটি বাঁশের কেল্লা তৈরি করে সেখানে তার সদর দপ্তর প্রতিষ্ঠিত করেন এবং বিভিন্ন স্থানে জমিদারদের কাছে কর দাবি করেন । এই ঘটনা বারাসাত বিদ্রোহ নামে পরিচিত । 24 পরগনা, নদিয়া, ঢাকা, খুলনা, যশোর, রাজশাহী, মালদা সহ বাংলার বিভিন্ন জেলায় তিতুমীরের আন্দোলন প্রসারিত হয় ।


ঙ) পরাজয়: জমিদার, নীলকর ও ইংরেজ কোম্পানির মিলিত বাহিনী 1831 খ্রিস্টাব্দে তিতুর বাহিনীকে আক্রমণ করে এবং কামানের আঘাতে তিতুর বাঁশেরকেল্লা ধ্বংস করে দেয় ।  টিটু ও তার কয়েকজন অনুগামী যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করে 19 নভেম্বর এর 1831 খ্রিস্টাব্দে । 


4) বাংলায় ফরাজি আন্দোলনের বিবরণ দাও ।

উত্তর: উনিশ শতকে বাংলায় সংঘটিত কৃষক বিদ্রোহ গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ফরাজি আন্দোলন । এই আন্দোলন প্রথমদিকে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলেও শেষ দিকে এই আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয় ।

ক) উৎপত্তি: ফরাজী কথার অর্থ হল ইসলাম নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য বা ইসলাম ধর্মের আদর্শে বিশ্বাস । ফরিদপুর জেলার হাজী শরীয়ত উল্লাহ ইসলাম ধর্ম সংস্কারের উদ্দেশ্য 1820 খ্রিস্টাব্দে ফরাজী নামে একটি ধর্মীয় সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন ।

খ) আদর্শ: হাজী শরীয়ত উল্লাহ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষকে দার-উল-হারব বা বিধর্মী দেশ বলে অভিহিত করেন । তিনি তার অনুগামীদের কলমা (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস), নামাজ (আল্লাহর উদ্দেশ্যে প্রার্থনা), রোজা (উপবাস), যাকাত (দান ধ্যান), হজ (তীর্থযাত্রা) প্রভৃতি পালনের পরামর্শ দেন ।

গ) রাজনৈতিক রূপ: ফরাজি আন্দোলন শীঘ্রই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয় । হাজী শরীয়ত উল্লাহ তার অনুগামীদের জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেন । আন্দোলন ফরিদপুর জেলায় শুরু হয় এবং তা ধীরে ধীরে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, খুলনা, যশোর, 24 পরগনা প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে । 

ঘ) দুদুমিয়ার ভূমিকা : শরীয়ত উল্লাহর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুধু মিয়ার নেতৃত্বে লক্ষ লক্ষ দরিদ্র কৃষক আন্দোলনে শামিল হয় । তিনি ঘোষণা করেন যে জমির মালিক আল্লাহ তাই কৃষকরা অন্য কাউকে খাজনা দিতে বাধ্য নয় । দুদুমিয়া একটি শক্তিশালী লাঠিয়াল বাহিনী ও গুপ্তচর বাহিনী গড়ে তুলে অত্যাচারী জমিদার নীলকরদের বাসভবন আক্রমণ করেন।

ঙ) নোমিয়ার  ভূমিকা : দুদুমিয়ার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিয়া আন্দোলনকে ধীরে ধীরে ধর্মীয় রূপ দেন । ক্রমে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে । 


5) সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ কী ছিল ?  

উত্তর: 1763 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1809 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার ঢাকা, নাটোর, রংপুর, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বীরভূম, মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে । এই বিদ্রোহের বিভিন্ন কারণ ছিল -

ক) দান হ্রাস: ব্রিটিশ সরকার বাংলার জমিদার ও কৃষকদের ওপর অতিরিক্ত রাজস্বের প্রধান ছাপালে সন্ন্যাসী ও ফকির জমিদারদের কাছ থেকে দানের পরিমাণ কমতে থাকে ।

খ) বাংলায় প্রবেশে বাধা: জনসেবকদের বাংলায় প্রবেশ করতে এবং ধর্ম চর্চা করতে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করা হয় । কোম্পানি দরগায় ফকির যাতায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ।

গ) ভূমি রাজস্ব ও কর: যেসব সন্ন্যাসী ও ফকির বাংলা স্থায়ীভাবে বসবাস ও কৃষি কাজ করতে শুরু করেন তাদের ওপর সরকার ও জমিদাররা ভূমির রাজস্বের পরিমাণ যথেষ্ট বাড়িয়ে দেন । ভূমি রাজস্ব ছাড়াও তাদের ওপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপ করা হয় ।

ঘ) রেশম ব্যবসা: সন্ন্যাসী ও ফকির দের অনেকেই রেশম ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । কোম্পানির কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে প্রায়ই কাঁচা রেশম ও রেশমি পণ্য জোর করে ছিনিয়ে নিত ।

ঙ) শোষণ ও অত্যাচার: কোম্পানির কর্মচারীও জমিদাররা সন্ন্যাসী ও প্রকৃতির ওপর নানাভাবে শোষণ এবং রাজস্ব আদায়ের জন্য যথেষ্ট উৎপীড়ন চালাত ।

চ) তীর্থ কর: সন্ন্যাস ও প্রকৃতি তীর্থযাত্রার ওপর সরকার কর বসায় এবং তাদের ধর্মাচরণে নানাভাবে বাধা সৃষ্টি করে ।

ছ) নির্যাতন: সন্ন্যাসী ও ফকির দের ওপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন চালানো হয় । 1778 খ্রিস্টাব্দে অন্তত 150 জন ফকিরকে হত্যা করা হয় ।

জ) মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ: ইজারাদার, পত্তনিদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগীরা সন্ন্যাসী ও ফকির নানাভাবে শাসন করতে থাকে । 


রচনাধর্মী প্রশ্ন : প্রশ্নমান  8

1) নীল বিদ্রোহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করো । 

উত্তর : 

নীল বিদ্রোহ 

ভূমিকা: ইউরোপে কৃত্রিম নীল আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রভৃতি দেশের খামার মালিকরা ভারতের নিলে লাভজনক ব্যবসা করতে আসত। বাংলা ও বিহারে 1782 থেকে 1785 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নীল চাষ শুরু হয়। বাংলার নদীয়া, যশোহর, পাবনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, মালদা প্রভৃতি জেলায় প্রচুর পরিমাণে নীল চাষ করা হতো। ইউরোপ থেকে আগত শ্বেতাঙ্গ খামার মালিকরা এদেশে জমি কিনে বাড়ি নিয়ে নীল চাষ করত এবং উৎপাদিত নিউ ইউরোপে রপ্তানি করে যথেষ্ট লাভবান হতো। এই কারণে নীলকর সাহেবরা বাংলায় নীল চাষীদের উপর প্রচন্ড অত্যাচার করে তাদের নীল চাষ করার জন্য বাধ্য করত। এই ধরনের চরম অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলা নীল চাষীরা 1859 থেকে 1860 খ্রিস্টাব্দে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলে, যা ইতিহাসে নীল বিদ্রোহ নামে পরিচিত । 

 

নীল বিদ্রোহের কারণ :

ক) এলাকা চাষ ও বেলাকা চাষ : এলাকা চাষের ক্ষেত্রে নীলকররা নিজেদের খাসজমিতে দূর থেকে সস্তা শ্রমিক এনে নীল চাষ করতো। এক্ষেত্রে প্রতিদিন 10 হাজার বিঘা জমিতে নীল চাষের জন্য খরচ পরত আড়াই লক্ষ টাকা। বেলাকা চাষ বারতি চাষের ক্ষেত্রে নীলকররা চাষীকে অগ্রিম অর্থ দিয়ে চাষির নিজের জমিতে নির্যাসে বাধ্য করতো। রায়তি চাষের জমি, লাঙল, সার বীজ ও অন্যান্য সব খরচ চাষিকে বহন করতে হত। ফলে এই পদ্ধতিতে প্রতি 10 হাজার বিঘা জমিতে নীল চাষের জন্য খরচ পত্র মাত্র 20 হাজার টাকা। তাই নীলকন্ঠ সর্বদা চাষীকে বে-এলাকা চাষে বাধ্য করতো।

খ) দাদন প্রথা- নীলকন্ঠ নীল চাষের জন্য চাষী কে বিঘা পিছু মাত্র 2 টাকা অগ্রিম দাদন দিত। কোন চাষী একবার দাদুর নিলে তা আর কখনই নীলকরের খাতায় পরিশোধ হতো না। আবার দাদন না নিলে চাষির গরু-বাছুর নীলকুঠিতে নিয়ে আঠাকে রাখা হতো।

গ) জমির মাপে কারচুপি: নীলকর এর কাছ থেকে দাদর নিয়ে যে জমিতে চাষের নীল চাষ করতে হতো তা মাপের সময় নীলকররা ব্যাপক কারচুপি করত। তারা গড়ে প্রতি আড়াই বিঘা জমিকে এক বিঘা বলে গণ্য করতো। 

ঘ) চাষির লোকসান: নীল চাষ করে চাষী প্রচুর আর্থিক লোকসানে হত। নীল কমিশন এর হিসাব অনুযায়ী এক বিঘা জমিতে নীলচাষের চাষের খরচ তেরো টাকা ছয় আনা। সেই নীল বিক্রিয়া করে চা শিল্পে তো মাত্র ছয় টাকা। অর্থাৎ প্রতি বিঘা নীলচাষে চাষী লোকসান হত সাত টাকা ছয় আনা। 

ঙ) অত্যাচার: ইকো সাহেবরা ছিলেন অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং অত্যাচারী। তারা নীল চাষ করতে না চাইলে নীলকরদের লাঠিয়াল, পাইক, বরকন্দাজ চাষীকে নীলকুঠিতে এনে আটকে রাখত এবং চাষীদের উপর নির্মম দৈহিক অত্যাচার চালাত । 

চ) ইংরেজ শাসকদের অবিচার: অত্যাচারিত তাহসিনা নীলকরদের বিরুদ্ধে ইংরেজ শাসকদের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কখনো ন্যায়বিচার পেত না। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ কর্মচারীরা বিচারে তাদের স্বজাতীয় শ্বেতাঙ্গদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করত। 

ছ) চাষীদের দুর্দশা: নীলকর সাহেবরা চাষীকে ধান চাষের পরিবর্তে জমিতে নীলচাষে বাধ্য করত। ফলে চাষির ধান উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং চাষির ঘরে খাদ্যাভাব দেখা যায়। এদিকে নীল চাষ করে চাষী আর্থিক লোকসানের শিকার হয়ে সর্বস্বান্ত হয়। 


বিদ্রোহের প্রসার : 

তীব্র শোষণে অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বাংলার প্রায় 60 লক্ষ নীলচাষী বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়। 

ক) আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তারা নীলকরদের শোষণ, অত্যাচার, নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা চাপিয়ে তাদের ষড়যন্ত্র করার বিষয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। 

খ) অভিযোগের কোনো প্রতিকার না পেয়ে আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায় চাষিরা দাদন নিতে অস্বীকার করে এবং নীলচাষ বয়কট করে । 

গ) নদিয়া, যশোর, পাবনা, ফরিদপুর, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর জেলার বহু চাষি চরম নির্যাতন ভোগ করেও নীল চাষে রাজি হয়নি। 

ঘ) আন্দোলনের তৃতীয় পর্যায় চাষিরা বর্ষা, তরবারি, লাঠি প্রভৃতি নিয়ে নীলকরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় । 

ঙ) বাংলা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একাউন্ট নীলচাষীদের পক্ষ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন। হিন্দু পেট্রিয়ট পত্রিকা তাদের পক্ষে কলম ধরে। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকের নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরেন। 


বিদ্রোহের অবসান : 

   বিদ্রোহের অবসান ইতিমধ্যে বাংলার ছোটলাট পিটার গ্রান্ট পূর্ববাংলা সফরে এলে হাজার নীলচাষি নদীর তীরে দাঁড়িয়ে তাদের করুণ অবস্থার কথা তাকে জানান। শেষ পর্যন্ত তিনি নীল কমিশন 1860 খ্রিস্টাব্দে গঠন করেন। এই কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলায় জোরপূর্বক নীলচাষ নিষিদ্ধ হলে নীল বিদ্রোহ থেমে যায়। 


বিদ্রোহের ফলাফল ও গুরুত্ব: 

     নীল বিদ্রোহ আপাতদৃষ্টিতে বন্ধ হলো বিদ্রোহের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বাংলার অত্যাচারিত নীলচাষীদের উদ্যোগে অসংগঠিত নীল বিদ্রোহ উনিশ শতকে ভারতের কৃষক আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায় । 

ক) স্বতঃস্ফূর্ত গণবিদ্রোহ: নীল বিদ্রোহ ছিল নীলকরদের বিরুদ্ধে সংগঠিত একটি স্বতন্ত্র গণবিদ্রোহ। এই বিদ্রোহের গুরুত্ব সম্পর্কে অমৃতবাজার পত্রিকার মন্তব্য করা হয়েছে যে নীল বিদ্রোহ দেশের মানুষকে রাজনৈতিক চেতনা ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের শিক্ষা দিয়েছিল । 

খ) শিক্ষিত সম্প্রদায় নজর: নীল বিদ্রোহ কে উপলক্ষ করে বাংলায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর গ্রাম গঞ্জের সাধারণ গরিব লোকদের প্রতি নজর দেয়। ফলো তো শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে নীল বিদ্রোহ ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ ঘটে। 

গ) রাজনৈতিক চেতনা: নীল আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ইংরেজ সরকারের অত্যাচার ও শোষণের আসল রূপ শিক্ষিত সমাজের চোখে ধরা পড়ে। 

ঘ) হিন্দু মুসলিম ঐক্য: নীল বিদ্রোহ কে কেন্দ্র করে বাংলায় হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের চাষিরা ঐক্যবদ্ধ হয় এবং একসঙ্গে আন্দোলনে শামিল হয়। 

ঙ) গান্ধীজির আন্দোলনের অগ্রদূত: নীল বিদ্রোহ কে বিশ শতকে গান্ধীজীর নেতৃত্বে পরিচালিত অহিংস অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের অগ্রদূত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

চ) জাতীয়তাবোধ: নীল বিদ্রোহ সামন্তপ্রথা উপনিবেশিক শাসনের ভিত্তিমূলে কুঠোর আঘাত করে। এই বিদ্রোহ শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি জাতীয়তা বোধ জাগ্রত করে শেষ পর্যন্ত তার স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত করে । 

 

উপসংহার : 

ঐতিহাসিক সতীশ চন্দ্র মিত্র বলেছেন, " এ বিদ্রোহ স্থানিক বা সামরিক নয়, উহার নিমিত্ত যে কত গ্রাম্য বীর ও নেতাদের উদয় হইয়া ছিল ইতিহাসের পাতায় তাহাদের নাম নাই। " তৎকালীন বড়লাট লর্ড ক্যানিং স্বীকার করেছেন যে তাদের কাছে নীল বিদ্রোহ 1857 খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বিদ্রোহের চেয়েও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে উঠেছিল। নীল চাষীদের উপর নির্মম অত্যাচার বাংলা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চোখ খুলে দেয়। এই বিদ্রোহ পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে । 

 

মাধ্যমিক ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায়ের লাস্ট মিনিট সাজেশনের PDF Download করার জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন  

 

 

pothon-pathon-online-telegram-channel


তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।

আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page

 

আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram

এছাড়া অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের মেল করতে পারো | আমাদের মেল আইডি হল: pothonpathononline@gmail.com

 

Tags:  WBBSE Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions, WBBSE Madhyamik History Suggestions 2022 PDF Download, WBBSE Class 10 History Suggestions 2022 Chapter 3, Madhyamik Suggestions 2022 with free PDF Download, Madhyamik suggestion history 2022, WBBSE Madhyamik Last Minute Suggestions 2022, মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 তৃতীয় অধ্যায় : প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ
 
 © Pothon Pathon Online

0/Post a Comment/Comments

Please put your valuable comments.

Previous Post Next Post