প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি মাধ্যমিক বাংলার বহুরূপী গল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে ।
WBBSE Madhyamik Bengali Notes
মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নোত্তর
গল্প : বহুরূপী
বহুমুখী উত্তরধর্মী প্রশ্নোত্তর (MCQ)
১. বহুরূপী গল্পটি কার লেখা –
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(খ) কাজী নজরুল ইসলাম
(গ) সুবোধ ঘোষ
(ঘ) শঙ্খ ঘোষ
উত্তর : (গ) সুবোধ ঘোষ
২. জগদীশ বাবুর বাড়িতে সন্ন্যাসী কতদিন ধরে ছিলেন ?
(ক) আট দিন
(খ) সাত দিন
(গ) চার দিন
(ঘ) দশ দিন
উত্তর : (খ) সাত দিন
৩. সন্ন্যাসী কোথায় থাকতেন?
(ক) হিমালয়ের গুহাতে
(খ) জঙ্গলে
(গ) মানস সরোবর এর কাছে
(ঘ) কোনোটিই নয়
উত্তর : (ক) হিমালয়ের গুহাতে
৪. পাগলকে দেখে আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিল–
(ক) বাসস্ট্যান্ডের কাছে
(খ) অটো স্ট্যান্ডের কাছে
(গ) হরিদার বাড়ির কাছে
(ঘ) জগদীশবাবুর দালানবাড়ীতে
উত্তর : (ক) বাসস্ট্যান্ডের কাছে
৫. হরিদা বাইজি সাজলে তাকে একটা সিকি দিয়েছিল–
(ক) ভবতোষ
(খ) বাসের ড্রাইভার
(গ) দোকানদার
(ঘ) স্কুলের মাষ্টার
উত্তর : দোকানদার
৬. লিচু বাগানটা ছিল–
(ক) দয়ালবাবুর
(খ) জগদীশবাবুর
(গ) ভবতোষ বাবুর
(ঘ) অনাদির
উত্তর : (ক) দয়াল বাবুর
৭.হরি দা বহুরূপী সেজে গিয়েছিল–
(ক) দয়াল বাবুর বাড়িতে
(খ) ভবতোষ বাবুর বাড়িতে
(গ) অনাদির বাড়ি
(ঘ) জগদীশ বাবুর বাড়িতে
উত্তর : (ঘ) জগদীশ বাবুর বাড়িতে
৮. পাড়ার ছেলে কিসের চাঁদা নেওয়ার জন্য জগদীশ বাবুর বাড়িতে গিয়েছিল?
(ক) স্পোর্ট এর
(খ) দুর্গাপুজোর
(গ) কালীপুজোর
(ঘ) কোনটাই নয়
উত্তর : (ঘ) কোনটাই নয়
৯. কথকদের আড্ডা বসত–
(ক) হরিদার ঘরে
(খ) জগদীশবাবুর বাড়ি
(গ) রাস্তার ধারে
(ঘ) ভবতোষ বাবুর দালান বাড়িতে
উত্তর : (ক) হরি দার ঘরে।
১০. কে এসে স্কুলের ছেলেদের ছড়িয়ে নিয়ে গেল–
(ক) দারোয়ান
(খ) স্কুল মাস্টার
(গ) হরি দা
(ঘ) জগদীশ বাবু
উত্তর : (খ) স্কুল মাস্টার
১১. হরি দা জগদীশ বাবুর বাড়িতে গিয়েছিল–
(ক) সন্ধ্যাবেলা
(খ) দুপুরবেলা
(গ) ভোরবেলা
(ঘ) বিকেলবেলা
উত্তর : (ক) সন্ধ্যাবেলা
১২. যখন হরিদা বহুরূপী সেজে জগদীশবাবুর বাড়ি গেল তখন তার গায়ে ছিল–
(ক) পাঞ্জাবি
(খ) সুতির জামা
(গ) সাদা চাদর
(ঘ)সাদা উত্তরীয়
উত্তর : (ঘ) সাদা উত্তরীয়
১৩. "আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়"— একথা বলেছেন–
(ক)জগদীশবাবু
(খ) হরিদা
(গ) সন্ন্যাসী
(ঘ) ভবতোষ
উত্তর : (খ) হরি দা
১৪. হরিদা জগদীশবাবুর বাড়িতে নিজের পরিচয় দিয়েছিল যা বলে–
(ক) মহাপুরুষ
(খ) সন্ন্যাসী
(গ) বিরাগী
(ঘ) কোনটাই নয়
উত্তর : (গ) বিরাগী
১৫. বিরাগীর ঝোলায় ভিতর ছিল–
(ক) গল্পের বই
(খ) জামাকাপড়
(গ) গীতা
(ঘ) কোরান
উত্তর : (গ) গীতা
১৬. জগদীশবাবু বিভাগে কে অনুরোধ করেন
(ক) তীর্থে তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য
(খ) তার বাড়িতে কয়েকদিন থাকার জন্য
(গ) একদিন তার সঙ্গে থাকার জন্য
(ঘ) তার বাড়িতে খাওয়ার জন্য
উত্তর : (খ) তার বাড়িতে কয়েকদিন থাকার জন্য
১৭. হরিদার মতে সব তীর্থ–
(ক) মানুষের বুকের ভিতরে
(খ) গভীর অরণ্যে
(গ) হিমালয়ের চূড়ায়
(ঘ) শূন্য আকাশে
উত্তর :(ক) মানুষের বুকের ভিতরে।
১৮. বিরাগীর জগদীশবাবুর বাড়িতে খেয়েছিলেন?
(ক) ঠান্ডা জল
(খ) লুচি
(গ) ভাত
(ঘ) রুটি
উত্তর : (ক) ঠান্ডা জল
১৯. "সে কথা কি ভুলেই গেলেন।"— কোন কথা?
(ক) জগদীশ বাবুর বাড়িতে যেতে
(খ):প্রণামী গ্রহণ করতে
(গ) সন্ন্যাসীকে প্রণাম করতে
(ঘ) হরিদার জবর খেলা দেখাতে
উত্তর :(ঘ) হরিদার জবর খেলা দেখাতে
২০. হরিদা সব তুচ্ছ করে সরে পড়ে ছিলেন–
(ক) খাঁটি সন্নাসীর মতো
(খ) আদর্শ মানুষের মতো
(গ) প্রতারকের মতো
(ঘ) কোনো উদাসীর মতো
উত্তর : (ক) খাঁটি সন্নাসীর মতো
অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর :
১. হরিদা জগদীশ বাবুর বাড়িতে কত বকশিশ পেতে পারতেন?
উত্তর : ফরিদা জগদীশ বাবুর বাড়িতে খুব বেশি হলে আট আনা দশ আনা বকশিশ দিতে পেতে পারতেন।
২. "এটা কি কান্ড করলেন"— কে কি কান্ড করেছিল?
উত্তর : হরিদা বিরাগী সেজেছিল।
জগদীশবাবু তাকে তীর্থভ্রমণের টাকা দিতে গেলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। এই কাণ্ডের কথা এখানে বলা হয়েছে।
৩. কি পেলে জগদীশবাবু শান্তি পাবেন?
উত্তর : জগদীশবাবু বিরাগজির উপদেশ পেলে শান্তি পাবেন।
৪. কেন হরিদা বকশিশ হিসাবে আট আনা বা দশ আনাকেই তার প্রাপ্য মনে করেছিলেন?
উত্তর : বহুরূপী দের জীবনে আট আনা বা দশ আনার বেশি আশা করা উচিত নয় বলেই
সেটুকুকে হরিদা তার প্রাপ্য বলে মনে করেছিলেন।
৫. কোন সময় এবং কি বেশে হরিদা জগদীশ বাবুর বাড়ি গিয়েছিল?
উত্তর : হরিদা সন্ধ্যার সময় আদুর গায়ে একটি ধবধবে সাদা উত্তরীয় আর ছোট থান পড়ে জগদীশবাবুর বাড়ি গিয়েছিল।
৬. "আমার অপরাধ হয়েছে"– বক্তার অপরাধ কি ছিল?
উত্তর : বিরাগী সাজে হরিদা কে দেখে জগদীশবাবু উপর থেকে নিচে নেমে আসেন নি, এটাই তাঁর ছিল অপরাধ।
৭. জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য কত টাকা দিতে চেয়েছিলেন?
উত্তর : জগদীশবাবু তীর্থ ভ্রমণের জন্য বিরাগী কে একশো এক টাকা দিতে চেয়েছিলেন।
৮. "হতেই পারে না"– কী হতে পারে না বলে বক্তার ধারণা?
উত্তর : হরি দা বিরাগী সাজলে কথক ও তার বন্ধুরা তাকে চিনতে পারেননি। তাদের মধ্যে ভবতোষ ভেবেছিলো এই বিরাগী কখনোই হরি দা হতে পারেনা।
৯. বিরাগী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু কি করেছিলেন?
উত্তর : বিরাগী চলে যাওয়ার আগে জগদীশবাবু নোটের তাড়া ভর্তি একটি থলে প্রণামী সহ বিরাগের পায়ের কাছে রাখেন। এই টাকা তিনি বিরাগী কে তীর্থ ভ্রমণ উপলক্ষে দিতে চেয়েছিলেন।
১০. "তিনি আপনার চেয়ে কিছু কম নয়"– 'তিনি' বলতে বক্তা কাকে বুঝিয়েছেন?
উত্তর : "তিনি" বলতে বক্তা পরম করুণাময় ঈশ্বরকে বুঝিয়েছেন।
১১. লেখক ও তার বন্ধুরা হরিদার কাছে কোন ঘটনা শোনাতে এসেছিলেন?
উত্তর : জগদীশ বাবুর বাড়িতে খুব উঁচু দরের এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন এবং তিনি সাত দিন ধরে তার বাড়িতে ছিলেন। এই খবরটাই লেখক ও তার বন্ধুরা তাকে শোনাতে এসেছিলেন।
১২. "সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস"– দুর্লভ জিনিসটি কি?
উত্তর : দুর্লভ জিনিসটি হলো জগদীশ বাবুর বাড়িতে উপস্থিত সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।
১৩. হরিদার ঘরটা কি রকম ছিল এবং সেখানে কি হতো?
উত্তর : সরু গলির মধ্যে হরিদার ছোট একটা ঘর ছিল। সেখানে সকাল-সন্ধ্যার আড্ডা বসত। চা চিনি দুধ তারাই আনতো। হরি দা শুধু আগুনের আঁচে জল ফুটিয়ে দিত।
১৪. হরিদ্বার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য টি কি ছিল?
উত্তর : হরিদা ছিল পেশায় বহুরূপী। সে কখনো পাগল সাজত, কখনো বা বাউল কখনো বা বোচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা। এটাই ছিল তার জীবনের নাটকীয় বৈচিত্র্য।
১৫. "দুটো একটা পয়সা ফেলেও দিচ্ছে"– কারা, কি জন্য পয়সা ফেলে দিচ্ছে?
উত্তর : হরি দা পাগল সাজলে বাসের যাত্রীরা দুটো - একটা পয়সা ছুড়ে দিচ্ছিলো ।
ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর :
১. "গল্প শুনে খুব গম্ভীর হয়ে গেল হরিদা।"— কোন গল্প শুনে হরিদা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর : গল্পের লেখক ও তার বন্ধুরা হরি দা কে জানিয়েছিল যে, জগদীশবাবুর বাড়িতে এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে ছিলেন। সেই সন্ন্যাসী বছরে একটি হরিতকী খান। তার বয়স হাজার বছরেরও বেশি। সন্ন্যাসী কাউকে তার পায়ের ধুলো দেন না। সেটি ছিল দুর্লভ জিনিস। জগদীশবাবু তার জন্য কাঠের খড়ম সোনার বল লাগিয়ে তার পায়ের কাছে ধরেছিলেন আর সন্ন্যাসী যখন সেই খড়ম পড়তে গেলেন তখন জগদীশবাবু তার পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন। সন্ন্যাসী এই গল্প শুনে হরি দা গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল।
২. "খুবই গরিব মানুষ হরিদা"— হরিদার দারিদ্র্যের পরিচয় দাও।
উত্তর : শহরে একটি গলির ভিতরে হরিদার ঘর। সে কোন কাজ করে না। সময় ধরে কোন অফিস বা দোকানে কাজ করা তার পছন্দ নয়। তাই তার কারণে অনেক সময়ই তার উনুনে জল ফোটে, ভাত ফোটে না। এই অভাব সে সহ্য করতে পারে না কিন্তু এক ঘেয়ে কাজ করতে তার ভয়ানক আপত্তি। শুধু তাকে তার জীবন বাঁচাতে মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে সামান্য কিছু রোজগার হয় তাতে কোনদিন একবেলা আধবেলা খেয়ে হরিদার দিন চলে যায়।
৩. কেন হরিদা কোনোদিন চাকরি করেন নি?
উত্তর : একঘেয়ে সময় বেঁধে কাজ হরিদার কোনদিনই ভালো লাগতোনা। ইচ্ছে করলেই হরিদা কোনো অফিসের কাজ অথবা কোন দোকানের কাজ পেয়ে যেত কিন্তু ঘড়ির কাটার সময় ধরে নিয়ম করে এক চাকরি করতে যাওয়া হরিদার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তার অভাব ছিল, হাঁড়িতে ভাত ছিল না কিন্তু এই অভাব সহ্য করেও হরিদা একঘেয়ে কাজ করতে চাইনি। তাই হরিদা কোন চাকরি করেনি।
৪. দয়ালবাবুর লিচু বাগানে কি ঘটনা ঘটেছিল?
উত্তর : দয়ালবাবুর লিচু বাগানে স্কুলের চারটি ছেলে এসেছিল লিচু নেওয়ার আশায়। আর সেখানে হরিদা পুলিশ সেজে দাঁড়িয়েছিল এবং সেই ছেলেগুলো কে ধরেছিল। তারপর সেই ছেলেদের স্কুলের মাস্টারমশাই সেখানে এসে ছেলেদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় জন্য নকল পুলিশের কাছে ক্ষমা চান এবং তাকে আট আনা ঘুষ দেন। সেই আট আনা ঘুষ নেওয়ার পর নকল পুলিশ হরি দা ছেলেগুলো কে ছেড়েছিল।
৫. "সে ভয়ানক দুর্লভ জিনিস" – দুর্লভ জিনিসটি কি? কে কিভাবে তা লাভ করেছিল?
উত্তর : দুর্লভ জিনিসটি হলো সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো।
জগদীশবাবুর বাড়িতে একবার এক সন্ন্যাসী সাত দিন ধরে থেকেছিলেন। সেই সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো ছিল অত্যন্ত দুর্লভ। জগদীশবাবু যেকোনো মূল্যে সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিতে চেয়েছিলেন। তাই জগদীশবাবু একজোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে সন্ন্যাসীর পায়ের কাছে ধরেছিলেন, তখন বাধ্য হয়ে সন্ন্যাসী তার পা এগিয়ে দিয়েছিলেন আর সেই ফাঁকে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীর পায়ের ধুলো নিয়েছিলেন।
৬. বিরাগী বেশে হরিদার বর্ণনা দাও।
উত্তর : হরিদার বিরাগীর রূপ ধারণ করে জগদীশ বাবুর বাড়িতে গেছিল। তার খালি গায়ে ছিল ধবধবে সাদা উত্তরীয়, পরনে ছিল একটি ছোট থান, মাথায় শুকনো সাদা চুল, হাত ও পায়ে ধুলো মাখা। তার হাতের ঝোলায় রাখা ছিল গীতা। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন জগতের সীমার উপর থেকে সে হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছে। তার শীর্ণ শরীরটাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন অশরীরী আর তার চোখ থেকে একটা অদ্ভূত উদাত্ত, শান্ত ও উজ্জ্বল দৃষ্টি যেন ঝরে পড়ছিল।
৭. "তবে কিছু উপদেশ শুনিয়ে যান"— বক্তা কে? তিনি কি উপদেশ শুনেছিলেন?
উত্তর : ❑ উল্লেখিত অংশটির বক্তা জগদীশবাবু ।
❑❑ বিরাগী তাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, এই ধন জন যৌবন সবকিছুই অস্থায়ী। কোন কিছুই স্থায়ী নয়। এই সমস্ত কিছুই একেকটি বঞ্চনা। মন প্রাণের সব আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শুধু একজনের আপন হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যাকে পেলে এই সৃষ্টির সব ঐশ্বর্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ ঈশ্বরের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
৮. "কিন্তু দোকানদার হেসে ফেলে— হরির কান্ড"– হরি কি কান্ড ঘটিয়েছিল?
উত্তর : বহুরূপী হরিদা বিভিন্ন বেশ ধারণ করত। একদিন সারাবেলার ব্যস্ততা কমে এসেছে, সন্ধ্যার আলো সবেমাত্র ফুটেছে হঠাৎ সবাই ঝুমঝুম শব্দ শুনতে পায়। সবাই দেখে এক রুপসী বাইজি ঘুঙুর পায়ে নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর সে ফুলসাজি এগিয়ে দিলে দোকানদাররা তাতে পয়সা দেয়। হরিদাই বাইজি সেজে যে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে ছিল আর বাইজিট আসলে এক বহুরূপী সেটা জানতে পেরে দর্শকেদের মোহভঙ্গ হয়।
৯. "হরিদার জীবনে সত্যিই একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।"– নাটকীয় বৈচিত্র্য টি কি ছিল?
উত্তর : গরীব হরিদা একটি ছোটো ঘরে দিন কাটাতো। কখনো ভাত জুটতো, কখনো বা না। কিন্তু তবুও রোজকার এই একঘেয়ে জীবনে একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল। হরি দা মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে রোজগার করত। কোনো কোনো দিন বিচিত্র সব ছদ্মবেশে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ত। যারা চিনতে পারত তারা কেও কিছু দিত না,কখনো বা বিরক্তের সাথে কিছু পয়সা ছুড়ে দিত তবু প্রতিদিন বহুরূপী বেশে রাস্তায় বেরোনোটাই হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্র্য ছিল।
১০. "ঠিক দুপুর বেলাতে একটা আতঙ্কের হল্লা বেজে উঠেছিলো"— আতঙ্কের হল্লা টি বর্ণনা করো।
উত্তর : একদিন দুপুর বেলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে এক পাগলকে দেখা গিয়েছিল। কটকটে লাল চোখের সেই পাগলের মুখ থেকে লালা ঝরছিল। কোমরে ছেঁড়া কম্বল আর গলায় টিনের কৌটা মালা জড়ানো পাগল টা থান ইট হাতে নিয়ে বসে বসা যাত্রীদের দিকে তেড়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখে যাত্রীরা চেঁচিয়ে উঠছিল। কেউ কেউ দু - এক পয়সা তার সামনে ফেলে দিচ্ছিলো। এইভাবে বাসস্ট্যান্ডে আতঙ্কের হল্লা শুরু হয়েছিল। তবে কেউ চিনতে না পারলেও বাস ড্রাইভার বুঝতে পেরেছিল লোকটা আসলে বহুরূপী হরিদা, যে কিনা আজ পাগল সেজে এসেছে।
বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর :
১. "বাঃ, এ তো বেশ মজার ব্যাপার!"— মজার ব্যাপারটি কি? তা বক্তার ওপর কি ধরনের প্রভাব ফেলেছিল? [২+৩]
উত্তর : সুবোধ ঘোষ রচিত "বহুরূপী" গল্পে জগদীশ বাবুর বাড়িতে থাকার জন্য এক সন্ন্যাসী এসেছিলেন। খুব উঁচু দরের এই সন্ন্যাসী হিমালয়ের গুহাতেই থাকতেন। সারাবছর একটা হরিতকী ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। তার বয়স ছিল হাজার বছরেরও বেশি। জগদীশবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি তার পায়ের ধুলো নিতে দেননি। জগদীশবাবু তাকে এক জোড়া কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সন্ন্যাসী কে বিদায় দেওয়ার সময় জগদীশবাবু একশো টাকার একটা নোট জোর করে সন্ন্যাসীর ব্যাগের ভিতরে ফেলে দিয়েছিল। এটাই ছিল মজার গল্প ।
সন্ন্যাসীর গল্প শুনে হরিদা প্রথমে গম্ভীর হয়ে যায়। সে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে। গরিব হরিদা নির্দিষ্ট কোন পেশার সাথে যুক্ত ছিল না। আসলে ঘড়ির কাটার সময় মিলিয়ে কাজ করা তার মোটেই পছন্দ ছিল না। তাই মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে সামান্য কিছু রোজগার করতো। তাতে তার দিন চলত না। জগদীশ বাবুর বাড়িতে আসার সন্ন্যাসীর কথা শুনে হরিদা চিন্তা করে জগদীশবাবু সন্ন্যাসীকে উদারহস্ত অনেক কিছু দান করেছেন অর্থাৎ তিনি ছিলেন সাধুভক্ত ব্যাক্তি। তাই সেও যদি কোন সাধু সন্ন্যাসীর বেশ ধারণ করে জগদীশ বাবুর বাড়িতে যায় তবে হরিদাও নিশ্চয়ই দক্ষিণা থেকে বঞ্চিত হবেন না। এই অভিপ্রায় নিয়েই জগদীশ বাবুর বাড়িতে হরিদা বিরাগী সেজে উপস্থিত হয়েছিল ।
২. ছোটগল্প হিসাবে বহুরূপী কতখানি সার্থক?
উত্তর : ছোটগল্প হল একটি নিটোল গল্পকাহিনী। যার বক্তব্য একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে দ্রুত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। সূচনায় থাকে আকস্মিকতায় এবং উপসংহারে থাকে কৌতুহলবোধ। এই বৈশিষ্ট্যের আলোকে সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পটি বিচার্য ।
বহুরূপী আসলে হরিদা নামের এক হতদরিদ্র মানুষের বাস্তব জীবন যাপনের কাহিনী। ঘড়ির কাঁটার সামনে সময় বেঁধে দিয়ে আর নিয়ম করে একই ধরনের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সে মাঝে মাঝে বহুরূপী সেজে যতটুকু রোজগার করে তাতেই তার দিন কেটে যায়। পেশা হিসাবে বহুরূপী সাজাকে বেছে নেওয়ার জন্য গল্পের নাম দেওয়া হয়েছে বহুরূপী। কিন্তু তার মধ্যে জীবনের ব্যঞ্জনা সূচক বিশেষ ভাবসত্যও পাওয়া যায়। পরিশেষে জগদীশবাবুর যাবতীয় প্রলোভন এবং অর্থ তুচ্ছ জ্ঞান করেছে তখনই গল্প কাহিনীটি ছোটগল্পের মর্যাদা পেয়েছে। বিভিন্ন চরিত্রে বেশ ধারণ করে পয়সা উপার্জন করা যায় হরিদার পেশা। তবুও সে জগদীশবাবুর টাকার থলি স্পর্শ করেননি। করলে ছোটগল্পের ব্যঞ্জনা নষ্ট হত। পারেননি বলেই পাঠকমন গল্পের উপসংহারে এসে অতৃপ্তি আর কৌতূহলে ঘুরপাক খেতে থাকে। এই ধরনের পরিমিতি আধুনিক ছোটগল্পের বিশেষত্ব। কয়েকটি চরিত্রের ক্রিয়াশীলতা কাহিনীর ভাব সত্য কে পরিণতির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তাই বলা যায় ছোটগল্পের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বহুরূপী গল্পটি সার্থক।
৩. বহুরূপী গল্প অবলম্বনে জগদীশবাবু চরিত্র বিশ্লেষণ করো ।
উত্তর : "বহুরূপী" গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হরিদা হলেও গল্পের মূল ভাবনা কে প্রতিষ্ঠা দিতে ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ।
ব্যক্তি জগদীশবাবু : ব্যক্তি জগদীশবাবুর ধনী, ঐশ্বর্যশালী। কৃপণ হলেও তিনি সৌম্য শান্ত এবং জ্ঞানী।
ভক্তি বিহ্বলতা:- জগদীশবাবু ঈশ্বরবিশ্বাসী তাই সাধুসন্ন্যাসীদের সেবা তার কাছে ঈশ্বর সেবা সমতুল্য। বাড়িতে আগত সন্ন্যাসীকে তিনি কাঠের খড়মে সোনার বোল লাগিয়ে দিয়েছিলেন। বিরাগী হরিদার কাছেও শুধু একটু আশীর্বাদ এর জন্য তিনি নতজানু হয়েছেন। তীর্থ ভ্রমণের জন্য একশো টাকার থলি বিরাগীর পায়ের কাছে নিবেদন করেছেন। আন্তরিক বিনয়ের সঙ্গে জগদীশবাবু বীরাগীর কাছে উপদেশ প্রার্থনা করেছেন ।
কাহিনীর গতি নিয়ন্ত্রক : বহুরূপী গল্পের ভাব সত্যে এক গভীর দার্শনিক তত্ত্ব রয়েছে। বহুরূপী হরিদা বিরাগী সেজে সত্য কে প্রতিষ্ঠা করেছে। সংসারের সবই সং, সার বলতে কিছুই নেই। বিরাগী চরিত্রের মধ্য দিয়ে হরিদা এ কথাই প্রমাণ করেছেন। জগদীশবাবুর প্রলোভন বিরাগীর চরিত্রাদর্শকে কষ্টিপাথরে যাচাই করে সত্যে পরিণত করেছে। জগদীশবাবু এখানে উপলক্ষ্যর ভূমিকা পালন করেছেন। এক কথায় বলা যায় বহুরূপী গল্পের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক চরিত্র হলো জগদীশবাবু, যা কাহিনী নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।
৪. "হরিদার জীবনে একটা নাটকীয় বৈচিত্র্য আছে।"— হরিদার জীবনে নাটকীয় বৈচিত্রের যে পরিচয় পাওয়া যায় তা লেখো ।
উত্তর : সুবোধ ঘোষের বহুরূপী গল্পে হরিদা ছিল তদন্ত গরিব মানুষ। কিন্তু ধরাবাঁধা জীবন কাটানো হরিদ্বার পছন্দ ছিল না। তাই অভাবের মধ্যেই জীবনের বৈচিত্র্য খুঁজতেন। বৈচিত্রের পেশাকে সঙ্গী করতে গিয়েই তিনি বহুরূপী সেজে খাবারের জোগাড় করতেন। হঠাৎ হঠাৎ বিচিত্র ছদ্মবেশে পথে বের হতো হরিদা। কখনো বাসস্ট্যান্ডের কাছে উন্মাদের মতো বেশে থাকতে দেখা যেত আবার কখনো শহরের রাজপথে বাইজি বেশে ঘুঙুর বাজিয়ে বাজিয়ে চলে যেতেন। শহরে আসা নতুন মানুষ যারা হরিদা কে চিনত না তারা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত আর পরিচিতরা তার কান্ড দেখে হেসে চলত। কখনো বোঁচকা কাঁধে বুড়ো কাবুলিওয়ালা, কখনো বা ফিরিঙ্গি সাহেব এরকমই নানা সাজে তাকে দেখতে পাওয়া যেত। এমনকি পুলিশ সেজে স্কুলের মাস্টারমশাই কেউও বোকা বানিয়ে ছিলেন। তার সব চরিত্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যথাযথ মানুষ কখনো কখনো হাসতো, কখনো তারিফ করতো, কখনো বা বিরক্ত হতো আর হরিদার যা সামান্য বকশিশ জুটতো তাতেই তার "তাঁর ভাতের হাঁড়ির দাবী মিটিয়ে দিতে চেষ্টা করেন"। কিন্তু এই দারিদ্রের মধ্যেই হরিদা যেন মুক্ত প্রাণের আনন্দ খুঁজে নিতেন ।
PDF will be available soon
Join Our Telegram Channel for Notifications
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.