Madhyamik History Last Minute Suggestions 2022 | মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 | পঞ্চম অধ্যায় : বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ

 

madhyamik-last-minute-suggestions-2022-history-chapter5

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার (Madhyamik Exam 2022 History Suggestions) জন্য History এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অর্থাৎ Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions.


মাধ্যমিক লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022

ইতিহাস

পঞ্চম অধ্যায়

বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ

 

একটি বা দুটি শব্দ উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান 2

1) ভারতের সর্বপ্রথম কবে, কারা, কোথায় আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ?

উত্তর: ভারতের সর্বপ্রথম 1556 খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে ।


2) কলকাতায় প্রথম মুদ্রিত বই কোনটি ?

উত্তর: 1777 খ্রিস্টাব্দে জেমস অগাস্টাস হিকি কর্তৃক প্রতিষ্ঠাতা ছাপাখানায় 1777 খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ক্যালেন্ডার ছাপা হয় । এই ক্যালেন্ডার আংশিক বইয়ের আকারের হওয়ায় কেউ কেউ একে কলকাতায় মুদ্রিত প্রথম বই বলে মনে করেন । 


3) কিভাবে বাংলা হরফ তৈরি করা হয়েছিল ?

উত্তর: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী চার্লস উইলকিন্স অন সর্বপ্রথম কাঠে খোদাই করে বাংলা তৈরী করেন । পরে পঞ্চানন কর্মকার নামে জৈনিক বাঙালির স্বর্ণকার ধাতব বাংলা অক্ষর তৈরি করেন ।


4) ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত বাংলায় শিক্ষা প্রসারে কি ধরনের সুবিধা করে দেয় ?

উত্তর: আধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত বাংলায় শিক্ষা প্রসারের নানাভাবে সহায়তা করে । 

(i) ছাপাখানায় মুদ্রণের বিপুল সংখ্যক বই অল্প সময়ে পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায় । 

(ii) ছাপাখানায় মুদ্রণের বইয়ের মূল্য হাতে লেখা বই এর চেয়ে অনেক কম হওয়ায় দরিদ্র অসাধারণ পড়ুয়ারা ছাপাখানা বই পত্রকে নিতে সক্ষম হয় ।

(iii) বাংলা বই মাতৃভাষা বাংলায় শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয় । 


5) উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কেন স্মরণীয় ?

উত্তর : বাংলা মুদ্রণ শিল্পের জগতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এক উজ্জ্বল নাম। তিনি প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন.রায় এন্ড সন্স নামক সংস্থাটিকে ভারতবর্ষে শ্রেষ্ট ছাপাখানায় পরিণত করেন। তিনি ভারতবর্ষে হাফটোন ব্লকের প্রবর্তন করেন এবং গবেষনার মাধ্যমে তার প্রভূত উন্নতি ঘটান। মুদ্রণ শিল্প ও প্রযুক্তিতে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর অবদান অপরসীম ।


6) কাকে 'বাংলা মুদ্রণশিল্পের জনক' বলা হয় এবং কেন ?

উত্তর: চার্লস উইলকিনস কে 'বাংলা মুদ্রণশিল্পের জনক' বলা হয়। তিনি প্রথম ধাতু নির্মিত সঞ্চলনযোগ্য বাংলা মুদ্রাক্ষরের জন্মদাতা ।


7) কারা শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত ছিল ?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত ছিল । 


8) ঢাকায় প্রথম কে এবং কবে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর:  ঢাকায় প্রথম আলেকজান্ডার বারবেখ 1856 খ্রিস্টাব্দে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । 


9) ভারতমাতা এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র কোনটি ? এটি কবে প্রকাশিত হয় ?

উত্তর:  ভারতে তো এশিয়ার প্রথম সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হল হিকির বেঙ্গল গেজেট বা হিকি'স গেজেট । এ সংবাদপত্রটি প্রথম প্রকাশিত হয় 1780 খ্রিস্টাব্দে ।


10)  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই কোনটি ? এটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয় ?

উত্তর:  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা প্রথম বই এর নাম ছেলেদের রামায়ণ । এটি প্রকাশিত হয় যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে ।


11) কে কবে সন্দেশ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন ? এটি কাদের জন্য প্রকাশিত হয় ?

উত্তর:  উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী 1913 খ্রিস্টাব্দের সন্দেশ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন । এই পত্রিকাটি  ছোটদের জন্য প্রকাশিত হয় ।


12) কে কবে কোথায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর: বিজ্ঞানের অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাফোর সহায়তায় বিখ্যাত চিকিৎসক ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার 1876 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা করেন ।


14) কে কোথায় গবেষণা করে রমন এফেক্ট  আবিষ্কার করেন ?

উত্তর: বিজ্ঞানী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন ইন অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সাইন্স বা IACS -এ গবেষণা করে রমন এফেক্ট আবিষ্কার করেন ।


15)  কারা কবে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ?

উত্তর: আইনজীবী ও শিক্ষা দরদি স্যার তারকানাথ পালিত স্যার রাসবিহারী ঘোষ 1914 খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন ।


16) বসু বিজ্ঞান মন্দির কে কবে প্রতিষ্ঠা করেন ? বসু বিজ্ঞান মন্দির এ কোন কোন বিষয়ে গবেষণা হত ?

উত্তর: খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু 1917 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন ।

বসু বিজ্ঞান মন্দিরের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশ বিজ্ঞান প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশ্বমানের গবেষণা হত ।


17) IACS এর পুরো কথা কি ? 

উত্তর: IACS এর পুরো কথা হল Indian Association for the Cultivation of Science.


18) জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ার কয়েকটি কারণ উল্লেখ করো ।

উত্তর:  জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ গুলি ছিল- 

  1. সরকারি বাধার ফলে জাতীয় শিক্ষার অগ্রগতি ব্যাহত হয় । 
  2. জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ ছিল না ।
  3. এ প্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্ট আর্থিক সংকটের শিকার হয় । 
  4. শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জাতীয় শিক্ষার চেয়ে বরং ব্রিটিশ সরকার শিক্ষাকে বেশি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেছেন । 


19) 'গোরা' উপন্যাসের মধ্য দিয়ে কোন দ্বন্দ এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় ?

উত্তর: জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কবিগুরুর রচিত 'গোরা' উপন্যাসে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত গ্রাম্য সামাজিক বন্ধন এবং কোনো নির্দিষ্ট ধর্মকে আশ্রয় করে উগ্র জাতীয়তাবাদ বনাম সর্বধর্মের সমন্বয় তৈরি উদারনৈতিক জাতীয়তাবাদ - এই মূল দ্বন্দ এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায় । গোরা উপন্যাসের মধ্য দিয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা অনুভব করেছে- ভারতবর্ষের পরিচয় কোনো নির্দিষ্ট জাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ।


20) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মরণীয় কেন ?

উত্তর: বাংলার চিত্রশিল্পের ইতিহাসে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অগ্রজ গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর নাম । উজ্জ্বল উনবিংশ শতকে জাতীয়তাবাদের জাগরণের সময় ভারতের একজন খ্যাতনামা ব্যং-চিত্র নির্মাতা ছিলেন গগনেন্দ্রনাথ  ঠাকুর । তাঁর 'বিরুপ ব্রজ' গ্রন্থে ১৯০৬ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার কার্টুন অঙ্কিত হয়েছে । বিষয়বস্তু হল বাঙালী সমাজের ইরেজ প্রীতি, বাঙালী চরিত্রের নানাদিক ও ঔপনিবেশিক শাসনের বিভিন্ন দিক নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রূপ ।


21) রবীন্দ্রনাথ কি উদ্দেশ্যে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো । এই উন্নয়নের মধ্যে ছিল গ্রামে কৃষির উন্নতি, ম্যালেরিয়ার মত রোগ প্রতিরোধ করা, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা ও চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রভৃতি । এই উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দে পল্লী সংগঠন কেন্দ্র স্থাপিত হয় । রবীন্দ্রনাথ 1923 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠান নামকরণ করেন শ্রীনিকেতন

 

মাধ্যমিক ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায়ের লাস্ট মিনিট সাজেশনের PDF Download করার জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন  

 

বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান 4

1) ছাপাবই -এর সাথে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক আলোচনা কর । 

উত্তর : উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক বাংলা ছাপাখানা ও বাংলা বইয়ের ইতিহাসে স্মরণীয় অধ্যায়। এই দশ বছরের মধ্যে শ্রীরামপুরে আরও বেশ কয়েকটি ছাপাখানা গড়ে ওঠে । ইতিমধ্যে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আত্মীয় সভা ১৮১৫ সালে, হিন্দু কলেজ ১৮১৭ সালে, স্কুল বুক সোসাইটি ১৮১৭ সালে, হেয়ার স্কুল ১৮১৮ সালে, কলকাতা স্কুল বুক সোসাইটি ১৮১৮ সালে এবং সংস্কৃত কলেজ ১৮২৪ সালে। অন্যদিকে শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে দিগদর্শন মাসিক পত্রিকা এবং সমাচার দর্পণ নামে সাপ্তাহিক পত্রিকা । গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক পত্রিকা বাঙ্গাল গেজেটি । এ দশকেই বাংলার গ্রামে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় শতাধিক বিদ্যালয় । ছাত্রদের জন্য পাঠ্যবই চাই । ছাপাখানা তখন শিক্ষা বিস্তারের হাতিয়ার। এ যুগ ধর্মীয় আন্দোলনেরও সবের জন্য দরকার ছাপাখানা । যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা কলকাতা, সারাবাংলা এমনকি সারা পূর্ব বাংলা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ছাপাখানা । সেখানে ছাপা হচ্ছে নানা ধরনের ও স্বাধের বাংলা বই । একদিকে প্রকাশিত হচ্ছে নানা চিত্র ও বিজ্ঞাপন শোভিত পঞ্জিকা, অন্যদিকে প্রকাশিত হচ্ছে আইন আদালত, ধর্ম, নীতিকথা, ইতিহাস, সঙ্গীত, কৃষিকাজ, টোটকা চিকিৎসা প্রভৃতি নানা বিষয়ের বই । পাঠ্য পুস্তকের দুনিয়াও সেদিন কম আকর্ষনীয় নয়। ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত, ভূগোল, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জীবনী, নীতিকথা, সঙ্গীত, ভাষাশিক্ষা, চিত্রকলা, মানচিত্র, এমনকি ছাত্রদের জন্য নোটবই প্রকাশিত হয় । ১৮৩৫- প্রতিষ্ঠিত হল মেডিকেল কলেজ, ১৮৫৪ -এ প্রেসিডেন্সি, ১৮৫৭ তে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি স্থাপনের মধ্য দিয়ে একে একে উচ্চশিক্ষার দরজা খুলে যেতে থাকে ।  

 

2) বাংলায় শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনের ছাপাখানার কি ভূমিকা ছিল ?

উত্তর: শ্রীরামপুর মিশনের খ্রিস্টান মিশনারি ও বিশিষ্ট ভাষাবিদ উইলিয়াম কেরি 1800 খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে যেসব বইপত্র মুদ্রিত হতো সেগুলো কম দামে সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে দেওয়া এবং বাংলা ভাষায় গন শিক্ষার প্রসার ছিল মূল উদ্দেশ্য । 

ক) বাংলা ভাষায় অনুবাদ: শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশিত হতো । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কেরে নির্দেশনায় বাইবেল, রামরাম বসুর ও মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার প্রমুখের উদ্যোগে রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য এর বাংলায় অনুবাদ । 

খ) বাংলা গদ্য সাহিত্য : বাংলা গদ্য সাহিত্যের প্রসারে শ্রীরামপুর ছাপাখানা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয় । এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন শ্রীরামপুর মিশনের উইলিয়াম কেরি, জোশুয়া মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড । ফলে সাধারণ পাঠকদের হাতে বাংলা সাহিত্য পৌঁছানোর সুযোগ আসে । 

গ) পাঠ্যপুস্তক রচনা: এই ছাপাখানা থেকে ছাত্রদের উপযোগী অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক ছাপা হতো । এসব পাঠ্যপুস্তক সাধারণ ছাত্রদের হাতে কম দামে বা কখনো বিনামূল্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে 1817 খ্রিস্টাব্দে ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় । 1818 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি সুন্দর ঝকঝকে পাঠ্যপুস্তক এর হাজার হাজার কপি শ্রীরামপুর ছাপাখানা থেকে ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হতো । 

ঘ) গন শিক্ষার প্রসার: শ্রীরামপুর ছাপাখানা মুদ্রিত বাংলা ভাষায় বিভিন্ন অনূদিত গ্রন্থ, বিভিন্ন বাংলা সাহিত্য এবং পাঠ্যপুস্তক সুলভে বাংলা সাধারণ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যায় । ফলে বাংলার গন শিক্ষার ব্যাপক প্রসার । 

     কম দামে উন্নত মুদ্রণের জন্য শ্রীরামপুর ছাপাখানা শীঘ্রই সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । তবে ভারতের ব্রিটিশ শাসকরা তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে উন্নত ছাপাখানার অস্তিত্ব মেনে নিতে নারাজ হলে ছাপাখানাটি পরে বন্ধ হয়ে যাবার মুখে আসে । আধুনিক ভারতের ইতিহাসে শ্রীরামপুরের ছাপাখানার গুরুত্ব অপরিসীম ।

 

3) ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স এর প্রতিষ্ঠা এবং বাংলা আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ভূমিকা আলোচনা করো । 

উত্তর: বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মৌলিক গবেষণা ও চর্চার উদ্দেশ্যে উনিশ শতকে ভারতে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি হতে থাকে সেগুলির মধ্যে অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স বা আইএসিএস । 

ক) সৃষ্টি: বিখ্যাত চিকিৎসক ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার অধ্যাপক ফাদার ইউজিন লাফোর সহযোগিতায় 1876 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বউবাজার স্ট্রিটে এ প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন । পরবর্তীকালে এটি যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয় । 

খ) গবেষণা: এই প্রতিষ্ঠানে পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় নিয়মিত মৌলিক গবেষণা এবং বিজ্ঞান বিষয়ক বক্তৃতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয় । যেসব গবেষণা বক্তৃতা প্রদানের কাজে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানের অংশ নিতেন। 

গ) গবেষণাপত্র: নিজেদের বিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণা মূলক কাজ গুলি প্রকাশের জন্য আইএসিএস ইন্ডিয়ান যোর্নাল অফ ফিজিক্স নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে । এছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাপত্র ও বিজ্ঞান পত্রিকায় এখানকার গবেষক ও বিজ্ঞানীদের গবেষণার কাজ প্রকাশিত হয় । 

ঘ) বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব: এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান গবেষণার কাজের সঙ্গে বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানী যুক্ত ছিলেন । তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, সুনির্মল বসু, চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন, মেঘনাথ সাহা, কে এস কৃষ্ণান প্রমূখ ।

ঙ) গবেষণা বিদ্যালয়: বিজ্ঞানী মেঘনাথ সাহা এখানে একটি সক্রিয় গবেষণা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এতে এক্স রশ্মি, আলোকবিজ্ঞান, চুম্বকত্ব, রমন ক্রিয়া প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক গবেষণার কাজ হয় ।

 

রচনাধর্মী প্রশ্ন : প্রশ্নমান  8

1) জাতীয় শিক্ষা পরিষদ সম্পর্কে আলোচনা করো ।

উত্তর: লর্ড কার্জন 1905 খ্রিস্টাব্দে বাংলা দুই ভাগে ভাগ করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হয় । এ সময় ব্রিটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে বাংলায় স্বদেশী আছে একটি শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয় । এর বাস্তব রুপায়ন হলো জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিষ্ঠা । 

ক) প্রতিষ্ঠা: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এর সভাপতিত্বে 1906 খ্রিস্টাব্দে 92 জন সদস্য নিয়ে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে । এর প্রথম সম্পাদক হলেন রাসবিহারী ঘোষ ।

খ) আর্থিক সহায়তা: এই পরিষদ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে পর্যন্ত কিশোর রায় চৌধুরী 5 লক্ষ টাকা, সূর্যকান্ত রায়চৌধুরী ২.৫ লক্ষ টাকা এবং রাজা সুবোধ চন্দ্র মল্লিক এক লক্ষ টাকা দান করে ।

গ) লক্ষ্য: জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল - জাতীয় আদর্শ অনুসারে সাহিত্য বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয় শিক্ষাদান করা, শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশ সেবার মনোভাব জাগিয়ে তোলা, নৈতিক শিক্ষা দান করা এবং মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার প্রসার ঘটানো প্রভৃতি ।

ঘ) কার্যকলাপ: পরিষদে কর্তৃপক্ষ নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞান, কারিগরি প্রভৃতি শিক্ষার বিষয়ে নিজেরাই পাঠক্রম তৈরি করে । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে 1906 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট মাসে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এর অধ্যক্ষ হন অরবিন্দ ঘোষ । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্যোগে বাংলার বিভিন্ন স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় গড়ে ওঠে । 

ঙ) বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট : বাংলায় স্বদেশী গাছে কারিগরি শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে শিক্ষা দরদি তারকনাথ পালিত 1906 খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন । 1910 খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট একসাথে জুড়ে গিয়ে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুল নাম হয় ।

চ) ব্যর্থতা : বিভিন্ন কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উদ্দেশ্য অনেকাংশে ব্যর্থ হয় । যেমন - 

  • জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতি সরকারের স্বীকৃতি ছিলনা,  এজন্য বহু ছাত্র এই শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী ছিল না ।
  • এই শিক্ষা গ্রহণের পর যে ডিগ্রী পাওয়া যেত তাদের সরকারি চাকরি লাভের সুযোগ ছিল না । 
  • পরিষদের অধীনস্থ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলি কিছুদিনের মধ্যেই প্রবল অর্থসংকট এর শিকার হয় ।

     শেষ পর্যন্ত 1911 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ প্রত্যাহার করে নিলে স্বদেশী আন্দোলন থেমে যায় । সেইসঙ্গে জাতীয় শিক্ষা পরিষদেরও কার্যকলাপ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের কার্যকলাপ বন্ধ হয়ে গেলেও বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ এন্ড টেকনিক্যাল স্কুল অফ স্কুল চলতে থাকে । পরবর্তীকালে এটি জাদবপুর কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এবং অবশেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় ।

 

2) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তায় কোনদিকটি শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছিল ? 

উত্তর : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার মানবজীবনের অর্জিত জ্ঞান ও তার সহজাত প্রতিভার এক অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করে গেছেন। ১৯০১ সালের ২২ ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন আশ্রমে প্রতিষ্ঠা করলেন শান্তিনিকেতন ব্রাহ্ম বিদ্যালয় বা ব্রহ্মচর্য আশ্রম। শান্তিনিকেতন আশ্রমে এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ১৮৬৩ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনসাধনার ক্ষেত্র হিসাবে রূপান্তরিত করে এই আশ্রমকে। 

  • শিক্ষার্থীর জীবন : রবীন্দ্রনাথের এই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ছিল চতুরাশ্রম ও তপোবনে র আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা । এখানে শিক্ষার্থীদের পাদুকা ও ছাতা ব্যবহার নিষিদ্ধ ছিল । সকাল সন্ধ্যা উপাসনা করতে হতো, রান্না ছাড়া বাকি নিজেদের কাজ নিজেকেই করতে হতো। আরাম বা সুখভোগ নয়- সরল জীবনযাত্রা, গুরুসেবা, অতিথিসেবা ইত্যাদি পূর্বকালের আশ্রমিক আদর্শে ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়াই ছিল লক্ষ্য । 

  • শিক্ষার উদ্দেশ্য : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, " মানুষ গড়াই শিক্ষা, মানুষ বলিতে যে যেমন বুঝিয়েছে সে সেই অনুসারে প্রণালী প্রবর্তন করিতে চাহিয়াছে।" তিনি বলেছেন যে, ছেলেদের মন জাগানোর কথা । 

  • প্রকৃতির কোলে শিক্ষা : রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে শিক্ষা হবে মুক্ত প্রকৃতির কোলে, খোলা আকাশের নীচে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তৃণ গুলম লতা, জলধারা, বায়ুপ্রবাহ, ছায়ালকের আবর্তন, জ্যোতিষ্কদলের প্রবাহ, পৃথিবীর প্রাণীরা এবং জগতের সকল অণু পরমাণু সব কিছুর সাথেই মানুষের নাড়ির যোগ। 

  • শিক্ষা আনন্দময় : রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, শিক্ষা লাভের মধ্য দিয়ে আনন্দ লাভ শিক্ষা লাভের একটি আবশ্যিক শর্ত। এই জন্য তিনি শান্তিনিকেতনে আনন্দ নিকেতন গড়ে তোলেন। সেখানে প্রকৃতির সহজ উদার পরিবেশ শিশুরা মনকে মুক্তি দিতে পেরেছিল। কবি তাদের জন্য গান রচনা করেন, ঋতু বন্ধনা শিখিয়ে দেন, বর্ষা ও বসন্তে উৎসবের আয়োজন করেন।

  • শিক্ষা মানুষকে নিয়ে : মানুষ মানুষের বিরাট ব্যবধান আছে, তাকে অপসারিত করে মানুষকে সর্বমানুষের বিরাট লোকে মুক্তি দিতে হবে। এই জন্য তিনি "জ্ঞানের আদিনিকেতন " অর্থাৎ হারি ডোম কৈবর্ত বাগদির জীবনে প্রবেশের কথা বলেছেন, কারণ জীবনে জীবন যোগ করা না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হবে গানের পসরা। 

       রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা ও জীবনযাপন যেন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকে। শান্তিনিকেতন পরিকল্পনা দ্বারা তিনি টা প্রমাণ করে গেছেন ।

 

মাধ্যমিক ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায়ের লাস্ট মিনিট সাজেশনের PDF Download করার জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন  

 



pothon-pathon-online-telegram-channel


তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।

আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page

 

আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram

এছাড়া অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের মেল করতে পারো | আমাদের মেল আইডি হল: pothonpathononline@gmail.com

 

Tags:  WBBSE Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions, WBBSE Madhyamik History Suggestions 2022 PDF Download, WBBSE Class 10 History Suggestions 2022 Chapter 5, Madhyamik Suggestions 2022 with free PDF Download, Madhyamik suggestion history 2022, WBBSE Madhyamik Last Minute Suggestions 2022, মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 পঞ্চম অধ্যায় : বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ 

 © Pothon Pathon Online

0/Post a Comment/Comments

Please put your valuable comments.

Previous Post Next Post