প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি দশম শ্রেণী ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায় : সংস্কার - বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা এর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর ।
মাধ্যমিক ইতিহাস প্রশ্নোত্তর
দ্বিতীয় অধ্যায়
সংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন (MCQ : ONE LINER FORMAT)
1. আত্মীয়সভার প্রতিষ্টাতা হলেন - রামমোহন রায় ।
2. কলকাতা বিশবিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন - জেমস উইলিয়ম কোলভিল ।
3. নীলদর্পণ নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করেন - মাইকেল মধুসূদন দত্ত ।
4. ভারতীয়দের শিক্ষার জন্য কোম্পানিকে প্রতিবছর অন্তত ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা বলা হয় - ১৮১৩ সালের সনদ আইনে ।
5. কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্টিত হয় - ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে
6. আধুনিক ভারতের জনক বলা হয় - রাজা রামমোহন রায় কে
7. স্বামীজী রামকৃষ্ণ মিসন প্রতিষ্ঠা করেন - ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে
8. হিন্দু কলেজের বর্তমান নাম - প্রেসিডেন্সি কলেজ
9. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশ করেন- হরিনাথ মজুমদার
10. ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ স্থাপন করেন - লর্ড ওয়েলেসলি
11. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন - লর্ড ওয়েলেসলি
12. নীলদর্পণ রচনা করেন- দীনবন্ধু মিত্র
13. ব্রাহ্মধর্মের প্রবর্তক ছিলেন - রাজা রামমোহন রায় ।
14. ব্রহ্মনন্দ নামে পরিচিত - কেশবচন্দ্র সেন
15. এশিয়াটিক সোসাইটি স্থাপিত হয় - ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে
16. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন - হরিশচন্দ্র মুখার্জী
17. চুঁইয়ে পড়া নীতি প্রবর্তন করে- উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক
18. মধ্যবিত্ত শ্রেণী কথাটি প্রথম উল্লেখ পাওয়া- বঙ্গদূত -এ
19. তত্ত্ববোধিনী সভার প্রতিষ্টাতা- দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর
20. সর্বধর্মসমন্বয়ের আদর্শ প্রচার করেছিলেন- স্বামী বিবেকানন্দ
21. ভারতে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন- মধুসূদন গুপ্ত
22. কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম বি এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়- ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে
23. কলকাতা মেডিকেল কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন- ডাঃ এইচ এইচ গুডিভ
24. হুতুম পেঁচা ছদ্মনাম - কালীপ্রসন্ন সিংহ
25. জেনারেল আসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেন- আলেকজান্ডার ডাফ
26. গ্রামবার্তা প্রকাশিকা প্রকাশিত হয়- কুষ্টিয়া থেকে
27. যত মত তত পথ - বলতে রামকৃষ্ণ বোঝাতে চেয়েছিলেন- সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ
28. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার ম্যাগনাকার্টা বলা হয়- উডের ডেসপ্যাচ কে
29. নববিধান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন- কেশবচন্দ্র সেন
30. জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইনস্টিটিউশন এর বর্তমান নাম - স্কটিশ চার্চ কলেজ
31. ব্রাহ্ম সমাজের মুখপাত্র ছিল- পার্থেনন পত্রিকা
32. নব্য বেদান্ত বলা হয়- শ্রীরামকৃষ্ণের মতবাদকে
33. রাজা রামমোহন রায় তুহাফৎ উল মুয়াহিদ্দিন গ্রন্থটি লেখা হয়েছিল- ফরাসিতে
34. নীল বিদ্রোহের কাহিনী যে পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল - হিন্দু প্যাট্রিয়ট
35. ভারতের প্রথম মহিলা চিকিৎসকের নাম- কাদম্বিনী গাঙ্গুলি
36. উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকার নাম - সমাচার দর্পণ
37. আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন- দয়ানন্দ সরস্বতী
38. শ্রীরামপুর ত্রয়ী নামে পরিচিত- উইলিয়াম কেরি, মার্শম্যান, উইলিয়াম ওয়ার্ড
39. হান্টার কমিশন গঠিত হয় - ১৮৮২ সালে
40. উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণকে তথাকথিত নবজাগরণ বলছেনে - অশোক মিত্র
আরও পড়ুন ঃ ইতিহাস সাধারণ জ্ঞান প্রশ্নোত্তর | History GK
সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন
সংক্ষিপ্ত উত্তর ভিত্তিক প্রশ্নাবলী : প্রতিটি প্রশ্নের মান 2
1) বামাবোধিনী পত্রিকার গুরুত্ব কী ছিল?
উত্তর: বামাবোধিনী পত্রিকার প্রধান গুরুত্ব ছিল- এই পত্রিকা
ক) নারী জনমত গঠনের ব্যবস্থা করে দেয় ।
খ) নারীজাতির চিন্তাভাবনাকে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবিত করে ।
গ) নারীদের নিজস্ব লেখনীর মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ করে দেয় ।
2) হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সমকালীন বাংলার কিরূপ সামাজিক চিত্র পাওয়া যায়?
উত্তর: হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার সমকালীন বাংলা সামাজিক শোষণ, সাধারণ মানুষের ওপর সরকার ও পুলিশের অত্যাচার, নীল চাষীদের উপর শোষণ ও অত্যাচার, দরিদ্র শ্রেণীর ওপর অত্যাচার, দরিদ্রদের দুরাবস্থা প্রভৃতি চিত্র পাওয়া যায় ।
3) গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকার কি কি বিষয় আলোচনা প্রকাশিত হত?
উত্তর: গ্রামবার্তা প্রকাশিকা পত্রিকায় নীলকর, জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার, এর বিবরণ সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান, বিপ্লবীদের শপথ ও বীরত্বগাথা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা প্রকাশিত হত ।
4) হুতুম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের কোন ভাগে কিসের জন্য রয়েছে ?
উত্তর: হুতুম প্যাঁচার নকশা গ্রন্থের প্রথম ভাগে কলকাতার সড়ক পার্বণ বারোয়ারি পুজো ছেলে ধরা ক্রিশ্চানে হুজুগ, সাতপেয়ে গরু, দরিয়াই ঘোড়া লখনৌ এর বাদশা এবং দ্বিতীয় ভাগের রথ, দুর্গোৎসব রামলীলা প্রভৃতির আলোচনা রয়েছে।
5) নীলদর্পণ নাটকের প্রধান আলোচ্য বিষয় কি?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
6) প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী দ্বন্দ্ব কি ?
উত্তর: ভারতে প্রাচ্য না প্রাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত এই প্রশ্ন কে কেন্দ্র করে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর শাসনকালে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা দুটি পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একদল প্রাচ্য পদ্ধতিতে এবং অপর দল পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের পক্ষে মত দেন। দুটি দলের এই দ্বন্দ্ব প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী দ্বন্দ্ব নামে পরিচিত ।
7) কে, কি উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উত্তর: লর্ড ওয়েলেসলি 1800 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল ভারতে ব্রিটিশ প্রশাসনে চাকরিরত যুবকদের প্রাচ্যবিদ্যা বিষয়ক জ্ঞান দান করা।
8) মেকলে মিনিট কি বলা হয় ?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
9) উডের ডেসপ্যাচ কি?
উত্তর: বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি চার্লস উড 1854 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন যা উডের ডেসপ্যাচ বা নির্দেশনামা নামে পরিচিত।
উডের ডেসপ্যাচয়ে যেসব সুপারিশ করা হয় সেগুলি হল -
i) একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর গঠন,
ii) কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজের একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা,
iii) শিক্ষক-শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন,
iv) উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি,
v) স্ত্রী শিক্ষার প্রসার প্রভৃতি ।
10) উডের ডেসপ্যাচ কে ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কেন ?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
11) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কয়টি বালিকা বিদ্যালয়ের উল্লেখ করো ।
উত্তর: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারী শিক্ষার প্রসারে বেশ কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
ক) 1849 খ্রিস্টাব্দে ড্রিংক ওয়াটার বেথুন এর সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় ।
খ) নদীয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় প্রতিষ্ঠা 35 টি বালিকা বিদ্যালয় ।
12) বাংলা ভাষায় প্রথম আত্মজীবনী কোনটি? এটি কার রচনা?
উত্তর: বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম আত্মজীবনী গ্রন্থ হল 'আমার জীবন'। এর রচয়িতা হলেন রাসসুন্দরী দেবী ।
13) রাজা রামমোহন রায় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের নাম লেখ।
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
14) হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় কাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল?
উত্তর: হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠায় রাজা রাধাকান্ত দেব, ডেভিড হেয়ার, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, স্যার হাইড ইস্ট প্রমুখের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ।
15) ড্রিংক ওয়াটার বেথুন সাহেব কেন স্মরণীয়?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
16) কলকাতা মেডিকেল কলেজের অবদান কি?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
17) আধুনিক শিক্ষার প্রসারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ভূমিকা কি ছিল ?
উত্তর: বাংলা তথা ভারতে আধুনিক শিক্ষা প্রসারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে-
ক) দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা দান শুরু করে।
খ) ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয় একদা উচ্চ শিক্ষার প্রসার নিয়ন্ত্রণ করত।
গ) ভারতীয় শিক্ষা, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে এখানে উন্নত শিক্ষাদান করা হত ।
(প্রতিটি প্রশ্নের মান - 4)
বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্ন :
1. উডের ডেসপ্যাচ সম্পর্কে কি জানো ?
উত্তর: লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এর আমলে পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান পাঠক্রম ও গঠন রীতিতে কোন সামঞ্জস্য ছিল না। এই পরিস্থিতিতে বোর্ড অফ কন্ট্রোল সভাপতি চার্লস উড 1854 খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা বিষয়ক একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এটি উডের ডেসপ্যাচ বা নির্দেশনামা নামে পরিচিত।
ক) সুপারিশ: উডের ডেসপ্যাচ এর সুপারিশ করা হয় সেগুলি হল-
- সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে পাঁচটি শ্রেণীবিভাজন।
- দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও প্রাথমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা।
- কলকাতা, মুম্বাই, মাদ্রাজ একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত।
- একটি পৃথক শিক্ষা দপ্তর গঠন।
- উচ্চশিক্ষা সর্বোচ্চ কর্তা হিসেবে দিরেক্টর অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন পথ সৃষ্টি।
- শিক্ষক শিক্ষণ ব্যবস্থা চালু।
- সাধারণ শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার।
- উচ্চশিক্ষায় ইংরেজি ভাষার গুরুত্ব বৃদ্ধি।
- স্ত্রী শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধি প্রভৃতি।
খ) মহাসনদ: উডের নির্দেশনামা বা ডেসপ্যাচ এর উপর ভিত্তি করে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই জন্য এই নির্দেশ নামা কে ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনাকার্টা বা মহাসনদ বলা হয় ।
2. নারী শিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তর: উনিশ শতকের সূচনা লগ্ন পর্যন্ত বিভিন্ন সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারী শিক্ষা প্রসারে তো হয়নি। নারী শিক্ষার প্রসারে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
ক) বিদ্যাসাগরের উপলব্ধি: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উপলব্ধি করেন যে নারী জাতির উন্নতি না ঘটলে বাংলা সমাজ ও সংস্কৃতির প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য তাদের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানো দরকার।
খ) প্রাথমিক উদ্যোগ: মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার বিদ্যাসাগরের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ছিল ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন এর সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতায় 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা। বিদ্যাসাগর 1857 খ্রিস্টাব্দের বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
গ) চূড়ান্ত উদ্যোগ: গ্রামাঞ্চলে নারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারেও বিদ্যাসাগর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার বিভিন্ন জেলায় স্ত্রী শিক্ষা বিধায়নী সম্মিলনী প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলিতে 13 হাজার ছাত্রী পড়াশোনা করত। তার ব্যক্তিগত ব্যয়ে বিদ্যালয়গুলো চলত।
ঘ) পরবর্তী উদ্যোগ: বিদ্যাসাগর পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্থানে আরো কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। মা ভগবতী দেবী স্মৃতিতে বিদ্যাসাগর 1890 খ্রিস্টাব্দের নিজ গ্রাম বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
3) শিক্ষা বিস্তারে ড্রিংক ওয়াটার বেথুন এর ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উত্তর: জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন সাহেব ছিলেন ভারতে একজন ব্রিটিশ কর্মচারী। তিনি উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
ক) মাতৃভাষার গুরুত্ব: রাজা রামমোহন রায়ের মতো মনীষীও যখন ইংরেজি শিক্ষার পক্ষে বক্তব্য রাখেন তখন বেথুন সাহেব গ্রাম বাংলার সাধারন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাতৃভাষার শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেন । বেথুন সাহেবের মতে মাতৃভাষার মাধ্যমে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব।
খ) নারী শিক্ষা: উনিশ শতকে এদেশে নারী শিক্ষার প্রসারে বেথুন ছিলেন অগ্রগণ্য। তিনি বাংলার মেয়েদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে রামগোপাল ঘোষ, দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পন্ডিত গুলমোহর বিদ্যালঙ্কার এর লেখা নারী শিক্ষা বিষয়ক একটি পুস্তিকা বেথুন সাহেব অর্থব্যয় ছেপে বিলি করেন।
গ) স্কুল প্রতিষ্ঠা: নারীদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বেথুন সাহেব কলকাতায় 1849 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি তার যাবতীয় স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বালিকা বিদ্যালয় কে দান করে দেন। বিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আবেদন বলেন যে, "আমি বিশ্বাস করি আজকের দিনটি একটি বিপ্লবের সূচনা করতে যাচ্ছে ।"
ঘ) কলেজ প্রতিষ্ঠা: বাংলার নারীদের মধ্যে আধুনিক উচ্চ শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে বেথুন সাহেব কলকাতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠান করেন। এটি বর্তমানে বেথুন কলেজ নামে পরিচিত । মাত্র একজন ছাত্রী কাদম্বিনী বসু কে নিয়ে এই কলেজের পঠন পাঠন শুরু হয় । বেথুন কলেজ হলো ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম মহিলা কলেজ ।
ঙ) অন্যান্য কৃতিত্ব: বেথুন সাহেব কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন । তিনি বাংলা ভাষার গ্রন্থ অনুবাদের কাজেও বিশেষ আগ্রহী ছিলেন ।
4) নারী সমাজের উন্নতির লক্ষ্যে বামাবোধিনী পত্রিকা উদ্যোগ নিয়েছিল ?
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
(প্রতিটি প্রশ্নের মান - 8)
রচনাধর্মী প্রশ্ন :
1. বাংলা নবজাগরণের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ।
উত্তর : উনিশ শতকে প্রথমদিকে বাংলাদেশ আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম প্রভৃতি সর্বক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে । এর প্রভাবে বাঙালি জগতে এক ব্যাপক অগ্রগতি ঘটে বা বৌদ্ধিক আন্দোলন শুরু হয় । এই অগ্রগতি উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ নামে পরিচিত ।
বিতর্কে নবজাগরণ:
ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার সুশোভন সরকার প্রমুখ উনিশ শতকের অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলে স্বীকার করে নিয়েছেন । স্যার যদুনাথ সরকার তার হিস্ট্রি অফ বেঙ্গল গ্রন্থের উনিশ শতকে বাংলার বৌদ্ধিক অগ্রগতিকে দ্বিধা ছাড়াই নবজাগরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন । তিনি লিখেছেন " ইংরেজদের দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার আমাদের নয় শতকের নবজাগরণ । এটি যথার্থই একটি নবজাগৃতি । কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইউরোপের নবজাগরণ দেখা দেয় উনিশ শতকের বাংলা নবজাগরণ ছিল তার চেয়ে অধিক ব্যাপক ও বৈপ্লবিক ।" অধ্যাপক সুশোভন সরকার বলতেন, পঞ্চদশ শতকের ইউরোপের নবজাগরণের ইটালির যেরূপ ভূমিকা ছিল উনবিংশ শতকে ভারতের নবজাগরণের বাংলার অনুরূপ ভূমিকা ছিল ।
অশোক মিত্র, বিনয় ঘোষ, সুপ্রকাশ রায়, ড. সুমিত সরকার, বরুণ দে প্রমূখ উনিশ শতকে বাংলার বৌদ্ধিক অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলে স্বীকার করেন না । সেন্সার কমিশনার অশোক মিত্র 1951 খ্রিস্টাব্দে সেনসাস রিপোর্ট উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ কে তথাকথিত নবজাগরণ বলে অভিহিত করেছেন । এই জাগরণ ছিল শহরকেন্দ্রিক এবং এটি সীমাবদ্ধ ছিল পরজীবী ভূস্বামীশ্রেণীর মধ্যে । আবার বিনয় ঘোষ মন্তব্য করেন যে, উনিশ শতকে বাংলার জাগরণ ছিল একটি ঐতিহাসিক প্রবঞ্চনা । সুপ্রকাশ রায় বলেন, " বাংলার জাগরণ আন্দোলন ইউরোপীয় নবজাগরণের বিপরীতধর্মী ।"
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার: বাংলা নবজাগরণ পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটায় । কলকাতার মধ্যবিত্ত শ্রেণী, ধনী ব্যবসায়ী, নব্য জমিদার শ্রেণী প্রমূখ পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংস্পর্শে এলে তারা পাশ্চাত্যের আধুনিক সাহিত্য, দর্শন, যুক্তিবাদ, মানবতাবাদ প্রভৃতির দ্বারা বিশেষভাবে আকৃষ্ট হন ।
নবজাগরণের প্রসার: উনিশ শতকে বাংলার বৌদ্ধিক অগ্রগতি বা নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র ছিল কলকাতা । কলকাতা থেকে এই অগ্রগতির ধারা পরবর্তীকালে বাংলা তথা ভারতের সর্বোচ্চ ছড়িয়ে পড়ে । রাজা রামমোহন রায় এই সময়কে জাগরণে সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমে আলোতে আসেন । কলকাতা থেকে অগ্রগতির ধারা পরবর্তীকালে বাংলা তথা ভারতের সর্বোচ্চ ছড়িয়ে পড়ে ।
সীমাবদ্ধতা : উনিশ শতকের নবজাগরণে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয় । এই আন্দোলন মূলত উচ্চবিত্ত উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । সাধারণ শ্রমিক কৃষক বা গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে এদের কোন সম্পর্ক ছিল না । অধ্যাপক অনিল শীল এই আন্দোলনকে এলিটিস্ট আন্দোলন বলে অভিহিত করেছেন । নবজাগরণ মূলত হিন্দুসমাজ বিশেষ করে উচ্চ বর্ণের মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । মুসলিম সমাজ বা নিম্নবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গেই নবজাগরণের মিল পাওয়া যায় না ।
গুরুত্ব : বাংলার নবজাগরণ অতিমাত্রায় ব্রিটিশ নির্ভর হয়ে পড়েছিল । ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার বলেছেন ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা কে গৌরবময় ভোট বলে অভিহিত করা যায় । পরাধীন দেশ গড়ে ওঠা নবজাগরণের নানা ত্রুটি দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব ছিল । তবে এই নবজাগরণ ভারতের মাটিতে একটি সর্বব্যাপী বৌদ্ধিক জাগরণে এনে দেয় এর ফলেই জন্ম দেয়, যা ভারতীয় জাতীয়তাবাদ যা ভারতের ইতিহাসে গতিপথ নির্ধারণ করে ।
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
5. শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করো ।
উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর দেখার জন্য নীচে দেওয়া লিংক থেকে PDF ডাউনলোড করুন ।
6. প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো ।
উত্তরঃ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে । এরপরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার নীতি নির্ধারণের বিষয়টি তাদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
1) দ্বন্দ্বের সূত্রপাত: ব্রিটিশ কোম্পানি ভারতে জন শিক্ষার প্রসারের উদ্যোগ নিলে এদেশে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটানো উচিত সে প্রশ্ন কে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
2) রামমোহন রায়ের উদ্যোগ: ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সনদ আইনের দ্বারা ভারতীয় জনশিক্ষার জন্য প্রতিবছর এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে রাজা রামমোহন রায় সরকারকে এক পত্রের দ্বারা এই টাকা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্থাৎ ইংরেজি ও আধুনিক বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য অনুরোধ জানান ।
3) প্রাচ্য-পাশ্চাত্যবাদী দ্বন্দ্ব: বেন্টিং এর শাসনকালে ভারতের প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করা উচিত এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা কার্যত প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট এবং পাশ্চাত্য বাদী বা অ্যাংলিসিস্ট নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন । এভাবে সরকারি শিক্ষানীতিতে নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
4) প্রাচ্যবাদী: প্রাচ্যবাদী রা ভারতের প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য ও দর্শন বিষয়ে শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন । প্রাচ্যবাদী সমর্থকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এইচটি প্রিন্সেস, কোল ব্রুক, উইলসন প্রমূখ ।
5) পাশ্চাত্য বাদী: পাশ্চাত্য বাদীর ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা অর্থাৎ ইংরেজি এবং আধুনিক বিজ্ঞান প্রভৃতি শিক্ষার প্রসারে দাবি জানান। পাশ্চাত্য বাদীর সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মেকলে, আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স, কলভিন প্রমূখ ।
6) মেকলে মিনিট : বেন্টিঙ্ক এর আমলে জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি মেকলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানিয়ে 1835 খ্রিস্টাব্দের 2 ফেব্রুয়ারি বড়লাট লর্ড বেন্টিং এর কাছে একটি প্রস্তাব দেন যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত । অবশেষে পাশ্চাত্যবাদী রাজি হন এবং সরকার ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারে নীতি নয় ।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের সম্পূর্ণ PDF ডাউনলোড করার জন্য নীচের DOWNLOAD বাটনে ক্লিক করুন ।
Join Our Telegram Channel for Notifications
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.