প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর এর জীবনী নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা |
বাংলা প্রবন্ধ রচনা
লতা মঙ্গেশকর
ভূমিকা :
লতা মঙ্গেশকর ছিলেন ভারতের একজন স্বনামধন্য গায়িকা। তিনি এক হাজারেরও বেশি ভারতীয় ছবিতে গান করেছেন এবং তার গাওয়া মোট গানের সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি।। এছাড়া ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষাতে ও বিদেশি ভাষায় গান গাওয়ার একমাত্র রেকর্ডটি তারই। তিনি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মুম্বাইয়ে ৯২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রাথমিক জীবন :
লতা মঙ্গেশকর ১৯২৯ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন ইন্দোর রাজ্যের রাজধানী ইন্দোর (বর্তমান মধ্যপ্রদেশ) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা পণ্ডিত দীনানাথ মঙ্গেশকর একজন মারাঠি ও কোঙ্কিণী সঙ্গীতজ্ঞ এবং মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। তার মাতা সেবন্তী (পরবর্তী নাম পরিবর্তন করে সুধামতি রাখেন) বোম্বে প্রেসিডেন্সির তালনারের (বর্তমান উত্তর-পশ্চিম মহারাষ্ট্র) একজন গুজরাতি নারী ছিলেন। তিনি দীনানাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী নর্মদা সেবন্তীর বড়বোন ছিলেন, যিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
শৈশবে বাড়িতে থাকাকালীন কে এল সায়গল ছাড়া আর কিছু গাইবার অনুমতি ছিল না তার কারণ তার বাবা চাইতেন ও শুধু ধ্রুপদী গান নিয়েই থাকুক। জীবনে প্রথম রেডিও কেনার সামর্থ্য যখন হলো, তখন তার বয়স আঠারো। কিন্তু রেডিওটা কেনার পর নব ঘুরাতেই প্রথম যে খবরটি তাকে শুনতে হয় তা হচ্ছে, কে. এল. সায়গল আর বেঁচে নেই। সঙ্গে সঙ্গেই রেডিওটা ফেরত দিয়ে দেন তিনি। ৫ বছর বয়সে বাবার পরিচালিত গীতি-নাট্যে অভিনয় করেন। ১৯৪১ সালে রেডিওতে দুটি গান রেকর্ড করেন, বাবার মৃত্যুর পর পেশা জীবনে পা রাখেন। ১৩ বছর বয়সে মারাঠি গানের রেকর্ড হয়, কিন্তু সে গান সিনেমা থেকে বাদ যায়। তাঁর প্রথম হিন্দি গান মারাঠি 'জগভাউ' নামক ছবিতে। হিন্দি চলচ্চিত্র 'আপ কি সেবা মে' প্রথম হিন্দি গান গেয়েছেন তিনি। তারপর ১৯৪৮এ প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়-এর ছবি 'শহিদ' ছবিতে তিনি সুযোগ পান এবং মজবুর সিনেমায় 'দিল মেরা তোড়া' গানে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা পান।
সঙ্গীত জীবন :
পিতার মৃত্যুর কিছুদিন পর পারিবারিক অভিভাবক মাস্টার বিনায়ক দামোদর কর্নাটকীর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর মুম্বাইতে চলে আসেন। এখানে ওস্তাদ আমন আলী খাঁ এর কাছে ভিন্ডিবাজার সংগীত ঘরানার মাধ্যমে হিন্দুস্তানি সংগীতে লতার হাতেখড়ি হয়। ১৯৪৮ সালে অভিভাবক বিনায়ক দামোদর কর্নাটকীর মৃত্যু হলে গোলাম হায়দার লতার সংগীতজীবনের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।
লতা মঙ্গেশকরের হাত ধরেই ভারতীয় ছায়াছবির গানের জগতে মাহফিল ঘরানার সংগীতের অবসান ঘটে এবং একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রকৃতির ঘরানা উঠে আসে। সম্পূর্ণ জীবনী তার গাওয়া হিন্দি ছায়াছবির গানের সংখ্যা পনেরো হাজারেরও বেশি।
উল্লেখ্যযোগ্য গানের তালিকা :
বাংলাতে ২০০টি গান রেকর্ড করেছিলেন। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য গান
- আজ নয় গুনগুন গুঞ্জন প্রেমের
- প্রেম একবারই এসেছিল
- রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে
- না যেও না রজনী এখনও
- ওগো আর কিছু তো নাই
- আকাশ প্রদীপ জ্বলে
- একবার বিদায় দে মা
তাঁর গলায় পনেরো হাজারেরও বেশি হিন্দি গান রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কিছু হিন্দি ছায়াছবির জনপ্রিয় গান -
- আয়েগা আনেওয়ালা (মহল)
- আজা রে পরদেসি (মধুমতী)
- পেয়ার কিয়া তো ডরনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম)
- আল্লা তেরো নাম (হম দোনো)
- অ্যায় মেরে ওয়াতন কে লোগো
- লগ যা গলে (ওয়োহ কৌন থি)
- আজ ফির জিনে কি (গাইড)
- রহে না রহে হম (মমতা)
পুরস্কার :
লতা মঙ্গেশকর তার কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। তিনি ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ভারতরত্ন (২০০১), দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মবিভূষণ (১৯৯৯), তৃতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে (১৯৬৯) ভূষিত হয়েছেন।[১১] এই সঙ্গীতশিল্পীকে ২০০৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাদের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা লেজিওঁ দনরের অফিসার খেতাব প্রদান করেছে। এছাড়া তিনি দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৯), মহারাষ্ট্র ভূষণ পুরস্কার (১৯৯৭),[১২] এনটিআর জাতীয় পুরস্কার (১৯৯৯), জি সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার (১৯৯৯),[১৩] এএনআর জাতীয় পুরস্কার (২০০৯), শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৩টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং ১৫টি বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ৪টি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অর্জন করেছেন। তিনি ১৯৬৯ সালে নতুন প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে শ্রেষ্ঠ নারী নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তী কালে তিনি ১৯৯৩ সালে ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মাননা পুরস্কার এবং ১৯৯৪ ও ২০০৪ সালে দুইবার ফিল্মফেয়ার বিশেষ পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অফ রেকর্ডে তাঁর নাম ওঠে। তাঁকে ১৯৮০ সালে দক্ষিণ আমেরিকার সুরিনামের সাম্মানিক নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ১৯৮৭ সালে আমেরিকার সাম্মানিক নাগরিকত্ব পান। ১৯৯০ সালে পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে সাম্মনিক ডক্টরেট প্রদান করা হয় । ১৯৯৬ সালে ভিডিওকন স্ক্রিন লাইফটাইম পুরস্কার। ২০০০ সালে আই আই এফ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার এরকম আরো বহু পুরস্কার ও সম্মানে তিনি ভূষিত।
শেষ সময় :
লতা ২০২২ সালের ৮ জানুয়ারি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রীচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা মুক্তও হয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী শারীরিক অসুস্থতায় অবস্থার অবনতি হয়। তিনি ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা নাগাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মুম্বই-এর শিবাজী পার্কে তাঁর অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী, সচিন তেন্ডুলকর, শাহরুখ খান প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে শিল্পীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ৭ ফেব্রুয়ারি অর্ধদিবস ছুটি এবং পরবর্তী পনেরো দিন তাঁর গান বাজানোর কথা ঘোষিত হয়।
উপসংহার :
ভারত তথা গোটা বিশ্বে একজন কিংবদন্তি শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। সঙ্গীত জগতের এক উজ্জ্বল অধ্যায়। তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য অগুনতি সংগীত। তার মৃত্যুর পর দেশ ও বিদেশ থেকে শোক প্রকাশ করা হয় এবং ভারত সরকার দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে। তবে লতা মঙ্গেশকরের মতন সঙ্গীত শিল্পীরা মৃত্যুর বহু ঊর্ধ্বে উঠে সময়কে জয় করে হয়ে ওঠেন কালজয়ী। তাদের নশ্বর শরীরের সমাপ্তি ঘটলেও তাদের প্রতিভা যুগোত্তীর্ণ সংগীত রূপে আমাদের মাঝে চিরকাল জীবিত থাকবে। তিনি ছিলেন আছেন থাকবেন ।
অন্যান্য প্রবন্ধ রচনার আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন |
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.