প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা কন্যাশ্রী প্রকল্প |
Madhyamik Bengali Suggestions
মাধ্যমিক সাজেশনস 2024
ভূমিকা :
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী আজ বিশ্ববন্দিত জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। সুদূর প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা ভারতীয় সংস্কৃতিতে বদ্ধমূল হয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বর্তমান কালে সেই অবহেলার স্বরূপ অনেকটা স্তিমিত হলেও দরিদ্র মানুষদের মধ্যে আর্থ-সামাজিক কারণে কন্যা সন্তানের প্রতি তুলনামূলকভাবে অবহেলা সমূলে বিনষ্ট হয়নি।
আর তা হয়নি বলেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার কন্যাশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের কন্যা সন্তানের প্রতি গুরুত্ব আরােপ করতে এবং বাল্যবিবাহ বন্ধ করে কন্যা সন্তানদের বিদ্যালয়মুখী করতে, তাদের সুষ্ঠ ও সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠিত করে যােগ্য সামাজিক মর্যাদায় ভূষিত করতে ‘কন্যাশ্রী প্রকল্পের যে অবতারণা করেছেন তা যথেষ্ট প্রশংসিত হয়েছে।
প্রেক্ষাপট :
কবি কালিদাস লিখেছেন—‘অর্থো হি কন্যা পরকীয়া এব’। অর্থাৎ কন্যা মানে পরের ধন । এই মনােভাব থেকেই কন্যা সন্তানকে অপরের হাতে সম্প্রদান করে ক্ষান্ত হতেন কন্যার পিতামাতারা । এর ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব হয়নি।
কারণ নজরুল তার ‘নারী’ কবিতায় লিখেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। অথচ মেয়েদেরকে সার্বিক উন্নয়নের সঙ্গে সমন্বিত না করে তাদের অসূর্যম্পশ্যা রূপে রেখে তাদের অন্তর্নিহিত শক্তির অপচয় সাধন করা হয়েছে।
তাই তাে নজরুল নারীদের আহ্বান জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘মাথার ঘােমটা ছিড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল!/…/দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন আছে যত আভরণ ।
তাৎপর্য :
‘কন্যাশ্রী’ শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কন্যা শব্দের অর্থ হল তনয়া, দুহিতা, মেয়ে ইত্যাদি। অন্যদিকে ‘শ্রী’ শব্দের অর্থ হল সুন্দর, লক্ষ্মী, সরস্বতী ইত্যাদি। অর্থাৎ মেয়েরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে হয়ে উঠবে সুন্দর, বিদ্বান ও স্বয়ংসম্পূর্ণ (লক্ষ্মী)।
কন্যা সন্তানদের আত্মবিশ্বাসী, স্বনির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলতে তাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত সত্তার বিকাশ ঘটাতে প্রয়ােজন উপযুক্ত পরিকল্পনা—সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হল ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প।
উদ্দেশ্য :
কন্যাশ্রী প্রকল্পের পরােক্ষ উদ্দেশ্য বহুমুখী হলেও প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য কিন্তু দ্বিবিধ—মেয়েদের বাল্যবিবাহ রােধ করা এবং তাদের মেধার বিকাশের জন্য বিদ্যালয়মুখী করা। শুধু তাই নয়, শিক্ষাক্ষেত্রে যে ‘স্কুল ছুট’ (Drop out)-এর সংখ্যা বাড়ছে তার।
গতিরােধ করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য । সর্বোপরি সমাজের সর্বাঙ্গীন অগ্রগতিতে মেয়েদেরকে সামিল করতে ও সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে এই প্রকল্পের জুড়ি মেলা ভার ।
লক্ষ্য :
এই প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য দুটি দিককে সামনে রাখা হয়েছে । (এক) অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠরতা ছাত্রীদের যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮-র মধ্যে তাদেরকে বছরে পাঁচশত টাকা অনুদান দেওয়া হবে ।
(দুই) যাদের বয়স ১৮ থেকে ১৯ বছর তাদেরকে এককালীন পঁচিশ হাজার টাকা দেওয়া হবে । বাৎসরিক পাঁচশত টাকা অনুদান দেওয়ার জন্য প্রতি বছরে ১৮ লক্ষ মেয়েদেরকে এই প্রকল্পে সামিল করানাে হবে ।
অন্যদিকে এককালীন অনুদানের জন্য সাড়ে তিন লক্ষ ছাত্রীদের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে । তবে যারা এই সুবিধা পাবে তাদের পিতা বা অভিভাবকের আয় বছরে এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকার বেশি হবে না এবং কন্যা সন্তানটিকে কোনাে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হতে হবে ।
সুফল :
২০০৭-০৮ সালের হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে পঞম । কন্যা সন্তানের অপরিণত বয়সে বিবাহ দেওয়ায় শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি প্রভৃতির শিকার হতাে ।
তাছাড়া বিয়ের নাম করে অল্পবয়সী মেয়েদের পাচার হয়ে যাওয়ার হাত থেকে উদ্ধার পেতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ । এমনকি মুর্শিদাবাদ (৬১.০৪%), বীরভূম (৫৮.০৩%), মালদহ (৫৬.০৭%) এবং পুরুলিয়ায় (৫৪.০৩%) কন্যার বয়স আঠার হওয়ার আগেই বেশিরভাগ মেয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় ।
এই প্রকল্প সেই বাল্যবিবাহের হারকে কমিয়ে দিতে যে পারবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই । দ্বিতীয়ত, আমাদের রাজ্যে যে স্কুল ছুট-এর সংখ্যা বাড়ছে তার মধ্যে মেয়েদের হার বেশি । এই প্রকল্প সেই স্কুলছুটের প্রবণতার হার কমাতে পারবে । তৃতীয়ত, কন্যাভূণ হত্যা, কন্যা সন্তানের প্রতি অবহেলা তথা বিভেদ সৃষ্টিও এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকটা স্তিমিত হবে ।
চতুর্থত, আঠারাে বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েদের বিয়ে সুনিশ্চিত করতে পারলে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির ক্ষেত্রে কিছু উল্লেখযােগ্য পরিবর্তন সম্ভব হবে । পঞ্চমত, মেয়েদের পড়াশােনা চালিয়ে যেতে তথা উচ্চশিক্ষায় সাহায্য করতে এই প্রকল্প যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ।
নিদর্শন :
ইতিমধ্যে কন্যাশ্রী প্রকল্পকে কেন্দ্র করে কন্যাশ্রী সংঘ গঠিত হয়েছে জেলায় জেলায় — যার দ্বারা দুদিক দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে । (এক) এরnদ্বারা বহু মেয়ে খেলাধুলায়, স্বনির্ভর ক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে ।
(দুই) চব্বিশ পরগনা, পুরুলিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় বেশ কিছু বাল্যবিবাহ রুখে দিতে পেরেছে । তাছাড়া এই প্রকল্পের ফলে মানব পাচার’ তথা শিশু বিক্রয়, বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার অনেকটা প্রতিহত করা গেছে ।
আন্তর্জাতিক সম্মান :
রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক এই প্রকল্প সমাজকল্যাণকর প্রকল্প হিসেবে প্রথম স্থান পেয়েছে । ইউনাইটেড নেশনস WSIS-16 পুরস্কার ছাড়া লন্ডনে (২০১৪) ইউনিসেফ কর্তৃক তা প্রশংসিত হয়েছে ।
গত ২৩ জুন, ২০১৭ তারিখে নেদারল্যান্ডে রাষ্ট্র- সংঘের আয়ােজিত অনুষ্ঠানে ৫৫২টি সমাজকল্যাণকর কাজের মধ্যে (৬২টি দেশের) পশ্চিমবাংলার কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যখন প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করলেন তখন তাঁর সঙ্গে সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসী নিজেদেরকে গর্বিত বােধ করেছে ।
এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বক্তার ভাষণে কন্যাশ্রী’জনহিতকর প্রকল্প হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। কন্যাশ্রী প্রকল্পকে শক্তিশালী করবার লক্ষ্যে কন্যাশ্রী মেয়েদের জন্য বিভিন্ন স্বনির্ভর প্রকল্প গৃহীত হয়েছে।
বর্তমান অবস্থা :
বর্তমানে K1, K2, K3 মিলিয়ে সুবিধাপ্রাপক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭৪০২, প্রাপক মেয়েদের সংখ্যা ১ কোটি ৫২ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৫৮ জন (১০/০৯/২০১৯ পর্যন্ত)। এই সুবিধা পাওয়ার জন্য অভিভাবকের আয়ের সীমা তুলে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্যাশ্রীরা (K3) বিয়ে হলেও এই সুবিধা পেতে পারবে। এছাড়া রাজ্যে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রতিষ্ঠা হয়েছে। স্কুলছুট এবং বাল্যবিবাহ অনেকাংশে কমেছে।
উপসংহার :
আমরাও এর সুফলের দিকে তাকিয়ে থাকব। কন্যা সন্তানরা আগামী দিনে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়াতে ও স্বীকৃতি পেতে পারবে এবং স্বনির্ভর হয়ে দেশের সম্পদ হয়ে উঠবে—এই প্রত্যাশা করবাে ।
বিদ্যাসাগর, রামমােহন এক সময় নারীদের দুর্দশা মােচনের লক্ষ্যে সংস্কার দূরীকরণ কর্মসূচি নিয়েছিলেন, বর্তমানের কন্যাশ্রী নারীর শিক্ষা ও স্বশক্তিকরণের লক্ষ্যে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে ।
অন্যান্য প্রবন্ধ রচনার আপডেট পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন |
আমাদের এই প্রয়াস আপনাদের ভালো লেগে থাকলে আমাদের সাহায্য করতে পারেন | আমাদের সাহায্য করতে নীচের DONATE বাটনে ক্লিক করুন |
তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।
আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page
আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram
Post a Comment
Please put your valuable comments.