Madhyamik History Last Minute Suggestions 2022 | মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 | চতুর্থ অধ্যায় : সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা

madhyamik-last-minute-suggestions-2022-history-chapter4
 

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, পঠন পাঠন অনলাইন এর ওয়েবসাইটে তোমাদের স্বাগত জানাই | আজকের এই পোস্টে আমরা আলোচনা করেছি আসন্ন মাধ্যমিক পরীক্ষার (Madhyamik Exam 2022 History Suggestions) জন্য History এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন অর্থাৎ Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions.


মাধ্যমিক লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022

ইতিহাস

চতুর্থ অধ্যায়

সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ 

 

একটি বা দুটি শব্দ উত্তর দাও : প্রতিটি প্রশ্নের মান 2

1) এনফিল্ড রাইফেলের টোটার ঘটনাটি কী ?

উত্তর: 1857 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনীতে এনফিল্ড রাইফেল নামে এক রাইফেল এর প্রচলন হয় । এতে ব্যবহৃত টোটাল খরচ বাদ দিয়ে কেটে দিলে ভরতে হত । সেনাবাহিনীতে গুজব ছড়িয়ে ছিল যে পাঁচটি গরু ও শুয়োরের চর্বি দিয়ে তৈরি করা হতো । এর ফলে মুসলিম ও হিন্দু সিপাহীরা ধর্মচ্যুত হবার আশঙ্কায় এইটা ব্যবহার করতে নাকচ করে এবং 1857 খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ।

 

2) মঙ্গল পান্ডে কে ছিলেন ?

উত্তর: গুগোল পান্ডে ছিলেন ব্যারাকপুর সেনাবাহিনীর 34 নং নেটিভ ইনফান্ট্রির একজন সিপাহী । তিনি 1857 খ্রিস্টাব্দের 29 মার্চ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন । এর ফলে সরকার মঙ্গলবার থেকে গ্রেপ্তার করে এবং বিচারে তার ফাঁসি হয় ।

 

3) 1857 খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের প্রকৃতি বা চরিত্র আলোচনা করো ।

উত্তর: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের চরিত্র নিয়ে মতভেদ রয়েছে । এই বিদ্রোহকে বিভিন্ন ব্রিটিশ ঐতিহাসিক এবং ভারতের কিছু মনীষীরা সিপাহী বিদ্রোহ, ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিকগণ মহাবিদ্রোহ, কিছু লোক গণবিদ্রোহ, কার্ল মার্কস প্রমূখ জাতীয় বিদ্রোহ, এবং সাভারকার ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন । 


4) 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহ কে কারা কেন জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন ?

উত্তর:  ঐতিহাসিক আউট্রাম, ডাফ্, রবার্টসন, টোরী দলের নেতা ডিসরেলি, সমাজতন্ত্রবীদ কাল মার্কস প্রমূখ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন । তারা বলেন যে মুজাফফরনগর, বিহার ও উত্তরপ্রদেশের সিপাহিদের সঙ্গে সংযোগ ছাড়াই অসামরিক লোকজন ও জমিদাররা এই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । এজন্য তারা কে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিযোগ করেছেন ।


5) 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে তারা কেন ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন ?

উত্তর: বিপ্লবী বিনয় দামোদর সাভারকার 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলেছেন । অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অধ্যাপক সুশোভন সরকার ইত্যাদি এই অভিমতকে সম্পূর্ণভাবে সমর্থন করেন । তাদের মতে ভারতবাসী জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই আন্দোলনে শামিল হয় । এজন্য তারা এ কে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে ব্যাখ্যা করেছেন । 


6) কে ভাইসরয় উপাধি লাভ করেন ?

উত্তর: 1858 খ্রিস্টাব্দে মহারানী ভিক্টোরিয়া নিজ হাতে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন । রানীর প্রতিনিধি হিসেবে গভর্নর জেনারেল ভারতের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পান, এই উপাধি ভাইসরয় নামে পরিচিত ।


7) উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে সভা সমিতির যুগ বলা হয় কেন ?

উত্তর: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার, জাতীয়তাবাদের উন্মেষ প্রভৃতির ফলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে ওঠে । এজন্য এ সময়কালকে সভা সমিতির যুগ বলা হয় । ডক্টর অনিল শীল এই শতককে সভা সমিতির যুগ বলে অভিহিত করেছেন ।


8) হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা প্রেক্ষাপট উল্লেখ করো ।

উত্তর:  1866 খ্রিস্টাব্দের জাতীয় ঐক্য সহায়ক সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতীয় ভাষা শিক্ষা জাতীয় ভাবধারার প্রসার ও সংস্কৃত শিক্ষার আদর্শ প্রচারের জন্য । এই সমিতি গঠন করেন রাজনারায়ণ বসু । তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নবগোপাল মিত্র 1867 খ্রিস্টাব্দের চৈত্র সংক্রান্তির দিন হিন্দু মেলা প্রতিষ্ঠা করেন এই জন্য সংগঠনটি আগে চৈত্র মেলা নামেও পরিচিত ছিল ।


9) কবে এবং কাদের উদ্যোগে ভারত সভা প্রতিষ্ঠিত হয় ?

উত্তর:  1876 খ্রিস্টাব্দে ভারত সভা এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠিত হয় । ভারত সভা প্রতিষ্ঠা সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলী ।


10)   দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন এর বিরুদ্ধে ভারত সভার আন্দোলনের পরিচয় দাও ।

উত্তর:  বড়লাট লর্ড লিটন 1878 খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন প্রণয়ন করে দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র গুলির ওপর নানা বিধি-নিষেধ আরোপ করেন । এর বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারত সভা আন্দোলন সংগঠিত হয় ।


11) ইলবার্ট বিল কী ?

উত্তর:  লর্ড রিপন ইলবার্ট বিলের মাধ্যমে ভারতের কৃষ্ণাঙ্গ বিচারকদের শ্বেতাঙ্গদের বিচার করার অধিকার দিলে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়রা ইলবার্ট বিল এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করে । ফলে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে ভারত সভা ইলবার্ট বিল এর সমর্থনে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে । 


12) আনন্দমঠ উপন্যাস কিভাবে জাতীয়তাবাদী ভারত কে উদ্দীপ্ত করেছিল ?

উত্তর: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠ উপন্যাস পরাধীন ভারত মাতা দুর্দশার চিত্র দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয় । আনন্দমঠ উপন্যাসের একমাত্র লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের হাত থেকে দেশ মাতাকে মুক্ত করা । আনন্দ প্রকাশের পর শীঘ্রই ভারতের বিভিন্ন ভাষা গ্রন্থটি অনূদিত হয় । ফলে ভারতে সর্বত্র জাতীয় চেতনার ঢেউ ওঠে ।


14) বর্তমান ভারত গ্রন্থটি কে রচনা করেন ? এটি কবে প্রকাশিত হয় ?

উত্তর: বর্তমান ভারত গ্রন্থটি রচনা করেন স্বামী বিবেকানন্দ ।

বর্তমান ভারত গ্রন্থটি প্রথম 1899 খ্রিস্টাব্দে প্রবন্ধ হিসেবে এবং 1905 খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয় ।


15)  গোরা উপন্যাসের গোরা পল্লীগ্রামের সমাজে কিরূপ ত্রুটি লক্ষ্য করেছেন ?

উত্তর: গোরা উপন্যাসের গোরা লক্ষ্য করেছেন যে পল্লীগ্রামের সমাজ - প্রয়োজনে মানুষকে সহ্য করে না, বিপদের সময় ভরসা দেয় না, এখানকার সামাজিক আচার বিচার মানুষের মধ্যে শুধু বিভাজন তৈরি করে ।


16) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্রের নাম করো ।

উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চিত্র হলো নির্বাসিত যক্ষ, বঙ্গমাতা, ভারতমাতা, শাহজাহানের মৃত্যু প্রভৃতি ।


17) অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ভারতমাতার হাতে থাকা দ্রব্য গুলির দ্বারা কিভাবে স্বদেশীয়ানা ও জাতীয়তাবাদী অনুভূতি প্রচারের চেষ্টা করেছেন ?

উত্তর: অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর আঁকা ভারতমাতার চার হাতে বেদ, ধানের শীষ, জপের মালা ও শ্বেতবস্ত্র দেখিয়েছেন । এগুলির দ্বারা তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের যুগে ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশী আনাই জাতীয়তাবাদী অনুভূতি জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন ।


18) গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে উপনিবেশিক সমাজের সমালোচনা করেছিলেন ?

উত্তর:  গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা জাতাসুর নামে একটি ব্যঙ্গচিত্র ভারতীয় সমাজে প্রচলিত জাতপাত ও বর্ণ বৈষম্য ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা ফুটে উঠেছে । চিত্রটিতে দেখানো হয়েছে যে বিশাল আকার এক যা তার ওপর বসে হোম ও পূজা করছেন মুণ্ডিত মস্তকবিশিষ্ট ব্রাহ্মণ একটি হাস্যরত কঙ্কালের জাতিটিকে ঘোরানোর ফলে এর নিচে অসংখ্য নিম্ন বর্ণের মানুষ নিষ্পেষিত হচ্ছে । 


19) অস্ত্র আইনের বিরুদ্ধে ভারত সভার আন্দোলনের পরিচয় দাও ।

উত্তর: বড়লাট লর্ড লিটন 1878 খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন প্রণয়ন করে সরকারের অনুমতি ছাড়া ভারতীয়দের আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিষিদ্ধ করেন । এর বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্বে ভারত সভা আন্দোলন গড়ে তোলেন ।


20) জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলার উল্লেখযোগ্য সভা-সমিতি বা সংগঠন গুলির নাম লেখ ।

উত্তর: জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার আগে প্রতিষ্ঠিত বাংলার উল্লেখযোগ্য সভা-সমিতির সংগঠনগুলি হলো - বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা 1836 খ্রিস্টাব্দ, জমিদার সভা 1838 খ্রিস্টাব্দ, হিন্দুমেলা 1867 খ্রিস্টাব্দ, ভারত সভা 1876 খ্রিস্টাব্দ ।


বিশ্লেষণধর্মী উত্তরভিত্তিক প্রশ্নোত্তর : প্রতিটি প্রশ্নের মান 4

1) মহারানীর ঘোষণাপত্র কি বলা হয়েছে? 

উত্তর: ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও নিষ্ফল হয়নি। মহাবিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহ ভারতের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়। এরপর থেকে ভারতীয় শাসনব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের মুঘল শাসন ও ব্রিটিশ ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির শাসনের অবসান হয় এবং মহারানি ভিক্টোরিয়া সরাসরি ভারতের শাসনভার গ্রহন করেন। মহারানি ভিক্টোরিয়া প্রতিনিধিরূপে প্রথম ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং আনুষ্ঠানিকভাবে এলাহাবাদে ১৮৫৮ সালের ১ নভেম্বর একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেন যা মহারানির ঘোষণাপত্র নামে পরিচিত ।

ক) ভারত শাসন আইন: মহাবিদ্রোহের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভারত শাসন আইনের ১৮৫৮ সালে দ্বারা ভারতে কোম্পানি শাসনের অবসান ঘটায় এবং মহারানী ভিক্টোরিয়া নিজের হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন।

খ) ঘোষণাপত্র প্রকাশ:  মহারানী ভিক্টোরিয়া 1851 খ্রিস্টাব্দের 1 নভেম্বর এক ঘোষণায় পত্রের মাধ্যমে ভারতীয় শাসন ব্যবস্থায় নতুন নীতি ও আদর্শের কথা প্রকাশ করেন ।

গ) ঘোষণাপত্রে বক্তব্য: মহারানীর ঘোষণাপত্রের দ্বারা জানানো হয় যে -

  1. ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়ে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না। 
  2. স্বত্ববিলোপ নীতি বাতিল করা হবে। 
  3. দেশীয় রাজাদের দত্ত গ্রহণের অধিকার দেওয়া হবে পুরোপুরি। 
  4. ব্রিটিশরা ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না।
  5. জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি যোগ্য ভারতীয়কে সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হওয়ার অধিকার প্রদান করা হবে। 
  6. সরকার দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি গুলি মেনে চলবে। 

    মহারানীর ঘোষণাপত্রে ভারতীয় বহু আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে সেগুলোর অধিকাংশই রূপায়িত হয়নি। তাই ভারতীয়দের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এই ক্ষোভ থেকে বাংলা তথা ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা সমিতির প্রতিষ্ঠিত হয় ।


2) 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কিরূপ মনোভাব ছিল ?

উত্তর: উনিশ শতকের প্রথমদিকে বাংলাদেশের আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তার ঘটায় এবং শিক্ষা গ্রহণের ফলে একজন শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান ঘটে । 1857 খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের প্রতি এই বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিভিন্ন মতবাদ আলোচনা করা হলো -

ক) অন্ধবিশ্বাস : শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত একটি বড় অংশ 1857 খ্রিস্টাব্দের পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের ওপর অগাদ বিশ্বাস রাখত । তারা ব্রিটিশ শাসন কে ভারতের পক্ষে কল্যাণ কল কর বলে মনে করত এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের ও বিরোধী ছিল ।

খ) 1857 এর মহা বিদ্রোহের বিরোধিতা: বিদ্রোহের মাধ্যমে ইংরেজদের বিতারণ এরপর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে কিনা এ বিষয়ে শিক্ষিত বাঙালি সমাজের আশঙ্কা ছিল । তাই তারা মহা বিদ্রোহ কে সমর্থন করেনি ।

গ) অভিমত:  হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় বিদ্রোহীদের নৃশংস, বর্বর এবং নরহত্যাকারী  বলে অভিহিত করেন । রাজনারায়ণ বসু 1857 এর বিদ্রোহকে নৈরাজ্যবাদী এবং নানাসাহেব আজিমুল্লাহ মত বিদ্রোহী নেতাদের অন্যায়কারী দানব বলে অভিহিত করেন । সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে বিদ্রোহে জনগণের সমর্থন ছিলই না ।

ঘ) বাংলায় বিদ্রোহের দুর্বলতা: 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত তীব্র হলেও শিক্ষিত বাঙালি সমাজের সমর্থন এর অভাবে এই বিদ্রোহ বাংলায় খুব একটা শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারেনি ।

ঙ) ফলাফল: শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালির প্রথম দিকে বিদ্রোহ কে সমর্থন না করলেও বিদ্রোহ দমনে সরকার যে নিষ্ঠুর দমননীতির পথ বেছে নেয় তা শিক্ষিতদের চোখ খুলে দেয় । তারা উপলব্ধি করে যে ব্রিটিশ শাসন কখনো ভারতীয়দের কল্যাণ করবে না । এই চেতনা পরবর্তীকালে জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করে তোলে ।

 

3) 'ভারতমাতা' চিত্রটি কিভাবে ভারতের জাতীয়তাবাদী প্রতীকে পরিণত হয়েছিল ?

উত্তর: ১৯০৫ সালে স্বদেশী আন্দোলনের উন্মাদনায় সারা বাংলা সেদিন দেশবন্দনা বা মাতৃবন্দনায় সবর হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ১৯০৫ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গমাতার চিত্র অঙ্কন করলেন। পড়ে ভগিনী নিবেদিতা এর নাম দেন ভারতমাতা। গৈরিক বস্ত্রে মণ্ডিতা এই মাতৃ মূর্তি চতুর্ভুজা যার চার হাতে রয়েছে পুস্তক, ধানের গোছা, শ্বেত বস্ত্র ও পুষ্পমালা। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি মায়ের দান - অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, দীক্ষা। 

 স্বদেশী বাংলায় এই ছবি নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। এই ছবি নব-জাতীয়তাবাদের প্রতীক কে পরিণত হয়। ছবি নিয়ে তৈরি পতাকা তৈরি করেন জাপানি শিল্পী ওকাকুরা এই পতাকা কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন শোভাযাত্রা বেরতে হয়ে শুরু করে। ছবিটি দেখে ভগিনী নিবেদিতা উচ্ছ্বাসিত হয়ে মন্তব্য করেন যে, হাতে অর্থ থাকলে নবভারতের প্রতীক এই ছবিটি ছাপিয়ে কেদার-বদ্রির আশ্রম থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ভারতের প্রতিটি কৃষকের ঘড়ে একটি করে উপহার দিতেন। অন্যদিকে ব্রাহ্মসমাজের অনেকেই কিন্তু এই মূর্তিপূজার বাড়াবাড়িতে বিরক্ত হন। মুসলিম সমাজ বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নেয়নি। এ সত্ত্বেও বলতে হয় যে, অবনীন্দ্রনাথ অঙ্কিত এই চিত্র দেশে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করে। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষে এই চিত্রটি জনসাধারণের মধ্যে প্রবল ভাবে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটায়। মূল চিত্রটি বর্তমানে রবীন্দ্র ভারতী সমিতির সংগ্রহে রয়েছে । 

 

4) সভা সমিতির যুগ বলতে কী বোঝো?

উত্তর: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে উনিশ শতকের প্রথম থেকে একের পর এক আদিবাসী ও কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হতে থাকে । এর সাথে উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন সভা সমিতি প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে । 

ক) সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন: মহাবিদ্রোহের পর দ্রুত ভারতের জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটতে শুরু হয় । এ সময় ভারতীয়রা উপলব্ধি করতে শুরু করে যে অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে ।

খ) সভা-সমিতির সূচনা: উনিশ শতকে চতুর্থ দশক থেকে এদেশে নানা সভা সমিতি গড়ে উঠতে থাকে । প্রথমে বাংলা এবং পরে বাংলার অনুকরণে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও অনুরূপ সমিতি গড়ে উঠতে থাকে ।  

গ) নামকরণ: উনিশ শতকে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের উদ্যোগে সমিতি গড়ে ওঠার জন্য কেমব্রিজ গোষ্ঠীর ঐতিহাসিক যুগের সভা সমিতির যুগ বলে ব্যাখ্যা করেছেন । 

ঘ) বিভিন্ন সভা সমিতি: উনিশ শতকে ভারতের বিভিন্ন সভা সমিতি গড়ে ওঠে এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, জমিদার সভা, ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন, হিন্দুমেলা, ভারত সভা, জাতীয় কংগ্রেস প্রভৃতি ।

 

5) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসের কি ছিল ?

উত্তর: উনিশ শতকে ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে যেসব সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল সে গুলির মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ছিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আনন্দমঠ উপন্যাসটি । দেশাত্মবোধের জাগরন এই গ্রন্থের অবদানের জন্য এটি স্বদেশপ্রেমের গীতা নামে পরিচিত ।

ক) পটভূমি: আঠারো শতকের বাংলার ছিয়াত্তরের মন্বন্তর এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহের পটভূমি কারা আনন্দমঠ উপন্যাসটি রচিত হয় । 

খ) ব্রিটিশ শাসনে মর্মান্তিক চিত্র: বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর উপন্যাসের ভারতবাসীকে তা লেখার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পরাধীন ভারত মাতার দুর্দশার করুণ চিত্র তুলে ধরেছেন । স্বৈরাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীকে বিদ্রোহের পথ দেখিয়েছেন ।

গ) বন্দেমাতরম সংগীত: যদি তার লেখা বন্দেমাতরম সঙ্গীতটি দেবী দুর্গার বন্দনাগীতি হিসেবে আনন্দমঠ উপন্যাসে ব্যবহার করেন । সংগীতটি ক্রমে দেশপ্রেমিকদের জাতীয় সংগীত ও অগ্নিমন্ত্রে পরিণত হয় । বিপ্লবীরা বন্দেমাতরম ধ্বনি তুলে সরকারের বিরোধিতা করে । ভিখাজি কামা কর্তিক রূপায়িত জাতীয় পতাকা বন্দেমাতরম ধ্বনি টি স্থান পায় ।

ঘ) সন্তান দল : এই উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র সন্তান দলকে দেশমাতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ হিসেবে তুলে ধরেছেন । এই উপন্যাসের যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজ সেনা কামান দাগা গেলেও তার মধ্যে সন্তান দল দেশ মাতার জন্য বন্দেমাতারাম ধনী দিয়ে এগিয়ে চলেছে দেখানো হয়েছে । দেশমাতার জন্য সন্তান দলের এরূপ আত্মত্যাগের চিত্র দেশবাসীর মনে জাতীয়তা বোধ জাগ্রত করে । 

 

6) টিকা লেখ : হিন্দু মেলা 

উত্তর : উনিশ শতকে বাংলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে এগুলির মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো হিন্দু মেলা । 

ক) প্রতিষ্ঠা: রাজনারায়ণ বসুর ভাবধারা অনুপ্রাণিত হয় এবং তার সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র 1866 খ্রিস্টাব্দের চৈত্র সংক্রান্তির দিন কলকাতায় একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । এজন্য এ সংগঠনটি চৈত্র মেলা নামে পরিচিত ছিল । সম্পাদক হন জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সহ-সম্পাদক হয় নবগোপাল মিত্র ।

খ) উদ্দেশ্য: প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য গুলি হল - 

  • সাধারণ মানুষের মধ্যেই হিন্দু ধর্মের অতীত গৌরব তা ছড়িয়ে দেওয়া । 
  • দেশীয় ভাষা চর্চা করা ।
  • জাতীয় প্রতীক গুলিকে মর্যাদা দেওয়া ।
  • এদেশে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিরোধের চেষ্টা করা ।
  • দেশবাসীর মধ্যে দেশাত্মবোধের চেতনা জাগিয়ে তোলা প্রভৃতি ।

 

গ) বার্ষিক সম্মেলন: হিন্দু মেলার প্রথম বার্ষিক সভায় দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ' মলিন মুখচন্দ্র মা ভারত তোমারি ' গানটি গাওয়া হয় । পরবর্তী বার্ষিক সভা গঠিত জ্ঞানেন্দ্র নাথ ঠাকুরের লেখা ' গাও ভারতের জয় ' গানটি গাওয়া হত । দেশপ্রেমিকদের জাতীয় সংগীত হয়ে ওঠে এই গান । 

ঘ) রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্ব: এসময়ের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব রাজনারায়ণ বসু 1875 খ্রিস্টাব্দে বার্ষিক সভায় সভাপতিত্ব করেন । তদায় 14 বছর বয়স্ক রবীন্দ্রনাথ নিজের লেখা হিন্দু মেলার উপহার কবিতাটি আবৃত্তি করেন । 

ঙ) বিশিষ্ট সদস্য : হিন্দুমেলা সদস্যদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছিলেন রাজা কমলকৃষ্ণ বাহাদুর, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, রামনাথ ঠাকুর, পিয়ারী চরণ সরকার, রাজনারায়ণ বসু, দ্বিজেন্দ্রনাথ সরকার, কৃষ্ণ দাস পাল প্রমূখ । 

     হিন্দুমেলা প্রসঙ্গে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বাল্যকথায় লি, " কলকাতার প্রাপ্তবর্তি কোনো একটি উদ্যানে বৎসরের তিন চারদিন ধরে এই মেলা চলত । সেখানে দেশি জিনিসের প্রদর্শনী, জাতীয় সংগীত, বক্তৃতাদি  বিভিন্ন উপায়ে লোকের দেশানুরাগ উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা করা হত " । 

 

রচনাধর্মী প্রশ্ন : প্রশ্নমান  8

1) 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি বা, চরিত্র কি রকম ছিল ? 

উত্তর : 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র 

সূচনা: 1857 খ্রিস্টাব্দের ব্রিটিশবিরোধী মহা বিদ্রোহ অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কাঠামোকে কাঁপিয়ে দেয় । এ বিদ্রোহের প্রকৃতি ও চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হলো - 

 ক) সিপাহী বিদ্রোহ: চার্লস রেক্স, জন লরেন্স প্রমূখ ঐতিহাসিক এবং অক্ষয় কুমার দত্ত, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কিশোরী চাঁদ মিত্র, দাদাভাই নওরোজি ভারতীয় 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে সিপাহী বিদ্রোহ বলেছেন । এদের মতে এই বিদ্রোহে যোগদানকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর লক্ষ্য ছিল নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করা । এ বিদ্রোহের সারা ভারতের সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ যোগ দেয়নি । বেশি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি বড় অংশ বিদ্রোহ কে সমর্থন করেনি । কিশোরী চাঁদ মিত্র বলেছেন, "এই বিদ্রোহ ছিল একান্তভাবেই সিপাহিদের অভ্যুত্থান" । 

খ) সামন্ত বিদ্রোহ: রমেশচন্দ্র মজুমদার সুরেন্দ্রনাথ সেন মানবেন্দ্রনাথ রায় প্রমূখ রা 1857 এর বিদ্রোহকে রক্ষনশীল ও সামন্ততান্ত্রিক শক্তিগুলির অভ্যুত্থান বলে অভিহিত করেন । তাদের মতে নানাসাহেব, লক্ষ্মীবাঈ, কুনওয়ার সিং প্রমূখ সামন্ত শ্রেণীর মানুষ এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন । অরেঞ্জী এটি ছিল সনাতনপন্থীদের শেষ বিদ্রোহ। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে এই বিদ্রোহ ছিল ক্ষয়িষ্ণু অভিজাত শ্রেণীর ও মৃতপ্রায় সামন্ত শ্রেণীর মৃত্যুকালীন আর্তনাদ । 

গ) জাতীয় বিদ্রোহ : ঐতিহাসিক আউট্রাম, ডাফ্, রবার্টসন, টরি দলের নেতা ডিস রেলী, সামন্ততন্ত্র বৃদ কার্ল মার্কস প্রমূখ বিদ্রোহ কে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিযোগ করেছেন । ঐতিহাসিক শশীভূষণ চৌধুরী বলেন যে এটি ছিল সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী জাতীয় বিদ্রোহ । তাদের মতে মুজাফফরনগর বিহার উত্তর প্রদেশ সিপাহীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন না করেই অসামরিক লোকজন ও জমিদার শ্রেণীর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে ওঠে । সিপাহীরা সিংহাসনচ্যুত মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করলে দেশবাসীর মনে জাতীয়তাবাদী মনোভাব জেগে ওঠে । 

ঘ) গণবিদ্রোহ: নটন, ম্যালসন, বল, জন কে প্রমূখ সাতক্ষীরাতে বিদ্রোহকে একটি গণবিদ্রোহ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন । এমনকি ডক্টর সুরেন্দ্রনাথ সেন বিদ্রোহের সামন্ত নেতাদের নেতৃত্বে কথা স্বীকার করেও তার '১৮৫৭' গ্রন্থে লিখেছেন, এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত নানা স্থানে গণবিদ্রোহের আকার নেয় । পশ্চিম বিহার থেকে পূর্ব পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে এ বিদ্রোহ বিস্তার লাভ করে ।

ঙ) স্বাধীনতা সংগ্রাম : বিপ্লবী বিনয় দামোদর সাভারকার 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেন । এছাড়া কাল মার্কস, এঙ্গেলস, পি সি যোশী, অশোক মেহতা, অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুশোভন সরকার প্রমুখ 1857 এর বিদ্রোহকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে অভিহিত করেন ।

চ) মহাবিদ্রোহ: ভারতের জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক গণবিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে একে মহাবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেন । হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় কে মহান বিপ্লব বলে অভিহিত করেন । এরিক স্টোক্স বলেছেন যে, এই বিদ্রোহ ছিল ভারতের ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের শেষ অধ্যায় । আন্দোলনে ইংরেজদের বিতারণ এর কথা ভাবা হয়েছিল ।

    1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের প্রকৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেলেও এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে । ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন 1857 খ্রিস্টাব্দে তথাকথিত প্রথম জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতীয় নয় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামও নয় । 

 

2) ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের বর্তমান ভারত গ্রন্থটির কি ভূমিকা ছিল ?

উত্তর : স্বামী বিবেকানন্দের বর্তমান ভারত গ্রন্থটি ঔপনিবেশিক আমলে ভারতীয়দের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ধারণা দেয় এবং জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে । এজন্য বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ বলেছেন, " বিবেকানন্দ আমাদের জাতীয় জীবনের গঠন কর্তা " । 

ক) ভারতের ইতিহাস : বর্তমান ভারত গ্রন্থটি বিবেকানন্দ বৈদিক যুগ থেকে ব্রিটিশ শাসন পর্যন্ত ভারতের সম্পূর্ণ ইতিহাস আলোচনা ও ব্যাখ্যা করেছেন । বৈদিক ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের শাসন, এরপর ক্ষমতাশালী যোদ্ধাদের নেতৃত্ব, পরে বৈশ্যদের প্রাধান্য প্রভৃতি কর্ম পর্যায়ে গ্রন্থটিতে আলোচিত হয়েছে। ভারত বন্ধের মাধ্যমে তিনি প্রধানত সময়িক ভারতের চিত্র তুলে ধরেছেন ।

খ) একতা: উপলব্ধি করেন যে পরাধীন ভারতের মুক্তির জন্য প্রয়োজন একমাত্র ঐক্যবোধের । ভারতীয় সমাজের বর্ণবৈষম্য দলিত শুদ্রদের প্রতি বঞ্চনার তীব্র নিন্দা করে সকল ভারতীয়দের একই গোত্রে দীক্ষিত হওয়ার কথা বলেছেন, সেই গোত্রের নাম মনুষ্যত্ব ।

গ) শূদ্র জাগরণ: তিনি বলেছেন বৈদিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত শুধু শুদ্রদের দমিয়ে রাখা হয়েছে । তাই এবার ভারতে শূদ্র জাগরণ ঘটবে এবং সূত্র সহ সমাজের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আলোয় আসবে । এই পথে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা হলেই প্রকৃত স্বাধীনতা ফুল ফুটবে । 

ঘ) ভ্রাতৃত্ববোধ : স্বামীজি তাঁর বর্তমান ভারত গ্রন্থটি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ভাই বলে আহ্বান করেছেন এবং সকলের সঙ্গে মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করতে বলেছেন ।

ঙ) নারীর মর্যাদা: বিবেকানন্দ নারীর মর্যাদার কথা উল্লেখ করে বলেছেন যে সীতা, সাবিত্রী ও দময়ন্তী হলেন ভারতীয় নারীর আদর্শ ।

চ) দেশপ্রেমের আদর্শ: বিবেকানন্দ তাঁর গ্রন্থে ভারতবাসীকে স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে দীক্ষিত করেন । তিনি বলেন, " ভারতবাসী আমার ভাই, ভারতবাসী আমার প্রাণ, ভারতের দেবদেবী আমার ঈশ্বর, ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ " । তার আকুল আহবানে যুবসমাজের মনে দেশপ্রেমের ঝড় ওঠে ।

ছ) জাতীয়তাবোধ ও দেশমাতার মুক্তি: বিবেকানন্দের লেখা ভারতের জাতীয়তা বোধ কষ্ট করে ফুটে উঠেছে তিনি ভারতের মাটিতে স্বর্গ ভারতের কল্যাণকে নিজের কল্যাণ বলে ভাবতে ও পাশ্চাত্যের অনুকরণ না করতে দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন । ভারত বর্তমান ভারত গ্রন্থটি তিনি বলেন যে, মানুষ জন্ম থেকেই মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত । পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ ছেড়ে তিনি ভারত মাতার মুক্তির জন্য দেশবাসীকে ঝাঁপিয়ে পড়তে আহ্বান জানান । 

      ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দের অসামান্য ভূমিকার কথা স্মরণ করে ঐতিহাসিক প্রধান তাকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের জনক বলে অভিহিত করেছেন । 

 

মাধ্যমিক ইতিহাসের সমস্ত অধ্যায়ের লাস্ট মিনিট সাজেশনের PDF Download করার জন্য নীচের লিংকে ক্লিক করুন  

 

 

pothon-pathon-online-telegram-channel


তোমাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে তা তোমরা এই পোস্টের নিচে থাকা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারো ।

আমাদের লেটেস্ট পোস্টের আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করতে পারো । আমাদের ফেসবুক পেজ জয়েন করার জন্য পাশের লিংকটিতে ক্লিক কর: Pothon Pathon Facebook Page

 

আমাদের Telegram Channel এ জয়েন হতে পাশের লিংক এ ক্লিক করন: Pothon Pathon Telegram

এছাড়া অন্যান্য প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের মেল করতে পারো | আমাদের মেল আইডি হল: pothonpathononline@gmail.com

 

Tags:  WBBSE Madhyamik 2022 History Last Minute Suggestions, WBBSE Madhyamik History Suggestions 2022 PDF Download, WBBSE Class 10 History Suggestions 2022 Chapter 4, Madhyamik Suggestions 2022 with free PDF Download, Madhyamik suggestion history 2022, WBBSE Madhyamik Last Minute Suggestions 2022, মাধ্যমিক ইতিহাস লাস্ট মিনিট সাজেশনস 2022 চতুর্থ অধ্যায় : সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা
 
 © Pothon Pathon Online

0/Post a Comment/Comments

Please put your valuable comments.

Previous Post Next Post